'তুচ্ছ' ঘটনা। তাতেই রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু। সোমবার মধ্যরাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে টানা ১৮ ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। ইটপাটকেল, দেশীয় অস্ত্র আর লাঠিসোটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দু'পক্ষ। একের পর এক বিস্ম্ফোরিত হয় ককটেল; চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। গতকাল সকালে দীর্ঘ সময় 'নিষ্ফ্ক্রিয়' থাকার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। রক্ত ঝরে তিন পক্ষেরই। সংঘর্ষে নাহিদ হাসান (১৮) নামের একজনের মৃত্যু হয়। আহত হয়ে শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নেন হাসপাতালে।
গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নাহিদ। পথচারী নাহিদ দুপুরে নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় একটি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান হিসেবে চাকরি করতেন তিনি। সংঘর্ষে গুরুতর অবস্থায় দুই শিক্ষার্থীসহ আরও চারজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
রাজনৈতিক কোনো ইস্যু নিয়ে অনেক দিন ধরেই রাজপথে বড় ধরনের কর্মসূচি নেই; এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও নেই। নিউমার্কেটের ঘটনায় আবার উত্তপ্ত হলো রাজপথ। নিউমার্কেট ও আশপাশের অন্তত ৭০টি মার্কেট বন্ধ থাকায় ঈদের আগে ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির শিকার হলেন।
সংঘর্ষের জের ধরে গতকাল রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে যানজট। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন নগরবাসী। ছোট ঘটনায় দিতে হয় বড় মাশুল। সংঘর্ষের শুরুতে তা থামাতে পুলিশের অতি উৎসাহ আর শেষের দিকে নিষ্ফ্ক্রিয়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
সংঘর্ষের সময় নীলক্ষেত মোড় থেকে ধানমন্ডি ২ নম্বর, এলিফ্যান্ট রোড ও আশপাশের এলাকার হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ আগামী ৫ মে পর্যন্ত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে; শিক্ষার্থীদের বিকেল ৫টার মধ্যে আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তা না মেনে শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত পর্যন্ত হলেই অবস্থান নেন। অবরুদ্ধ করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে। বিকেল থেকে ওই এলাকায় মোবাইল ফোনের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় কিছু যানবাহন চলতে দেখা গেলেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে দোকানকর্মীদেরও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। প্রস্তুতি চলছিল মামলা দায়েরের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, 'এ ঘটনা দ্রুত কুল ডাউন হবে। দায়ীদের আইনের আওতায় নেওয়া হবে।'