ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের আধিপত্যের লড়াই ক্রমেই প্রকাশ্যে আসছে। যুদ্ধের মধ্যেই শান্তিকামী ও জোটনিরপেক্ষ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। প্রকারান্তরে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছে মস্কো। এমন ধরনের 'অভাবনীয় পরিণতি'র জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও অন্য কিছু অঞ্চল থেকে রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আশা করা হচ্ছিল দু'পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হতে পারে। তবে এই পরিস্থিতিকে রাশিয়ার পরাজয় দেখিয়ে শান্তি আলোচনায় অনীহা দেখাচ্ছে ইউক্রেন। একই সঙ্গে রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নানামুখী পদক্ষেপ ও পশ্চিমা বিশ্বের আরও জোরালো ভূমিকা চাইছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ অবস্থায় যেসব পশ্চিমা দেশকে 'শত্রু' হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাশিয়া, তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করেছে মস্কো। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারা। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলনীয় দোনবাস অঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক প্রজাতন্ত্র ঘিরে রুশ সৈন্যরা অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস করার দাবি করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া বলছে, জাহাজের আগুনে বিস্ম্ফোরণ থেকে ধীরে ধীরে ডুবে গেছে তাদের রণতরীটি। তবে এ ঘটনার পর ফের কিয়েভের কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম। একই সঙ্গে ক্রেমলিন হুমকি দিয়েছে, কিয়েভে ফের হামলা শুরু হতে পারে। এ ঘটনাকে জেলেনস্কি পরমাণু হামলার হুমকি হিসেবে দেখছেন।
শান্তি চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই আগ্রহী নয়। ন্যাটোর সম্প্রসারণও বন্ধ করতে চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সুরে সুর মিলিয়ে সামরিক উত্তেজনায় ঘি ঢালছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন। তাতে যোগ দিয়েছে জার্মানিও। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা রেখে পরমাণু শক্তিধর রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাট্টা এখন ইউরোপ। রাশিয়াকে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য করতে চায় তারা। বিপরীতে রাশিয়াও তাদের দিকে বিশ্বের একাংশকে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব এখন কার্যত দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও পছন্দ অনুযায়ী দূরবর্তী সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিষয়টি বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
ইউক্রেনের মিত্রদেশগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করেছে রাশিয়া। দেশটি বলেছে, এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের মিত্রদেশগুলোর 'অভাবনীয় পরিণতি' হতে পারে। রাশিয়ার এ হুঁশিয়ারি নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোয় আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে- কী ধরনের পরিণতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে রাশিয়া।