এবারের সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক প্রদানের বিষয়টি তাহলে কর্তৃপক্ষ বেশ সাফল্যজনকভাবে ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছে। যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তা বাতিল করা হয়েছে। কেন, কী কারণে ওই ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হয়, আবার কেনই বা তা বাতিল করা হয় তার কোনো কারণ জানায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে অনুমান করা যায়, পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ধূলিঝড় উঠেছিল তা কর্তৃপক্ষের চোখেও আঘাত হেনে জ্বালা ধরায়।
ভাগ্যিস, চাল-ডাল-তেল-পানি, মাছ-মাংস-পেঁয়াজ-রসুন নিয়ে অষ্টপ্রহর খাবি খাওয়া সাধারণ মানুষের সাহিত্য পুরস্কার-টুরস্কারের মতো উচ্চমার্গের বিষয়াদি নিয়ে ভাববার ফুরসত নেই, অভিরুচিও তেমন নেই, নইলে হয়তো নিদেনপক্ষে দু-চারটা বক্তৃতা-বিবৃতির উপজীব্য বিষয় হতো এবারের এই পুরস্কার। বিষয়টা নিয়ে হৈ-হুলস্থুল হলো না বলেই যে ধরে নিতে হবে ‘সব ঠিক হ্যায়’ বলে পাবলিক এটা মেনে নিয়েছে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। ঘা হয়তো শুকিয়েছে, কিন্তু আঘাত কি শুকায় কখনো?
স্বাধীনতা পদক আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব। সরকার এটা যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করে ধরে নিতে হবে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অতুলনীয় ব্যুৎপত্তির অধিকারী। ওই ক্ষেত্রে চলমান সময়ে সবচেয়ে জ্ঞানী বা সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই তা পেতে পারে। আর সে উদ্দেশ্যে যে বাছাইপ্রক্রিয়া চলে তা যদি হয় সম্পূর্ণ নিখাদ, নিরপেক্ষ ও অনুসন্ধানধর্মী, তাহলে পুরস্কৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যথার্থতা সম্বন্ধে কোনো সংশয় থাকে না। পুরস্কার ঘোষণা হওয়ার পর চমকে ওঠার মতো কোনো প্রতিক্রিয়াও হয় না কোনো মহলে। কোনো বিতর্কও সৃষ্টি হয় না।
কিন্তু এবারের পুরস্কার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল সাহিত্যে এমন একজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যাকে কেউই চেনে না। তাঁর লেখা কোনো গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-কবিতা বা নাটক আমার মতো কোনো সাধারণ পাঠকের চোখে কোনো দিন পড়েছে বলে মনে হয় না। তাহলে কি তিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত ইংরেজ কবি টমাস গ্রে তাঁর অমর কবিতা ‘এলিজি রিটেন ইন আ কান্ট্রি চার্চইয়ার্ড’-এ যাঁদের কথা উল্লেখ করেছেন তাঁদের মতো কেউ। অজপাড়াগাঁর গোরস্তানে প্রদোষকালে দাঁড়িয়ে কবির মনে হচ্ছিল ওই অখ্যাত পল্লীর কবরগুলোতে হয়তো ঘুমিয়ে আছেন কবি মিল্টনের মতো কত কবি, কত বীরসেনানী, যাঁদের অস্তিত্বের কথা কেউ জানেননি কোনো দিন। তাঁরা সবাই ‘ফুল ম্যানি আ জেম অব পিওরেস্ট রে সিরিন/দ্য ডার্ক আনফ্যাদমড্ কেইভস অব অশেন বেয়ার...। ’ সাগরের অতল তলে তারা যেন ঘুমিয়ে আছেন অগণিত মণিমুক্তার মতো অথবা মরুপ্রান্তরে ফোটা অগণিত সুরভিত কুসুমের মতো, যাদের সৌরভ শুধু ছড়িয়ে পড়ে ওই মরু হিল্লোলেই : ‘ফুল ম্যানি আ ফ্লাওয়ার ইজ বরন্ টু ব্লাশ আনসিন/অ্যান্ড ওয়েস্ট ইটস্ সুইটনেস ইন দ্য ডেজার্ট এয়ার। ’