রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পেশাদার অপধারী চক্রের সদস্যরা। পথে-ঘাটে ওঁৎ পেতে থাকে চোর, ছিনতাইকারী। তারা সুযোগ বুঝে টার্গেটের ওপর হামলে পড়ছে। লুটে নিচ্ছে পথচারীর সর্বস্ব। সশস্ত্র ছিনতাইকীদের হামলায় অনেক সময় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। বেড়েছে ভয়ঙ্কর খুনের ঘটনাও।
চাঁদাবাজি, দস্যুতা, গাড়ি ও মোটরসাইকেল চুরির ঘটনার পারদও ঊর্ধ্বমুখী। প্রকাশ্যে দিনদুপুরেও এ ধরনের অপরাধ হচ্ছে। আর রাতের রাজধানী এখন অনেকটাই অরক্ষিত। অন্ধকার নামলে মানুষের চলাচল মোটেও নিরাপদ নয়। এতে ঘর থেকে বেরুলেই ঢাকাবাসীর মধ্যে ভর করে অজানা আতঙ্ক। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যানও বলছে, সম্প্রতি বেড়েছে প্রায় সব ধরনের অপরাধ। ডিএমপির ৫০ থানায় গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যেসব অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
অপরাধ কর্মকাণ্ড সামাল দিয়ে মানুষের মনে স্বস্তি ফেরাতে থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের অপরাধ সভায় ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম এই নির্দেশনা দেন। থানাভিত্তিক অপরাধীদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশও দেন তিনি।
ডিএমপির মাসিক অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে নয়টি খুনের ঘটনা ঘটে। ফেব্রুয়ারিতে খুনের ঘটনা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ তে। এর মধ্যে পাঁচটি খুনই হয়েছে মিরপুর এলাকায়। মার্চ মাসের খুনের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড আলোচিত হয়েছে দেশ জুড়ে। ২৪ মার্চ শাজাহানপুরে ব্যস্ততম রাস্তায় প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী ঘাতক। এতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু। একই ঘটনায় ঘাতকের তপ্ত বুলেটে প্রাণ হারান রিকশারোহী পথচারী কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতি। গুলিতে আহত হন টিপুর মাইক্রোবাস চালক মনির।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই স্বাধীনতা দিবসের ভোরে মিরপুরের কাজীপাড়ায় দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসাবে খ্যাত উদ্যমী দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। কিন্তু দুটি ঘটনার একটিরও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। আস্থাহীনতার কারণে নিহত কলেজছাত্রী প্রীতির পরিবার থানায় অভিযোগও দায়ের করেননি। বিচার চাননা প্রীতির বাবা। এছাড়াও টিপু মার্ডারের একদিন পর ২৫ মার্চ সবুজবাগের বাসায় ঢুকে গৃহবধূ তানিয়া আক্তারকে নির্দয়ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।