৮ জানুয়ারি ১৯৭২ এর পড়ন্ত বিকেলে বিবিসি ওয়ার্ল্ডের একটি প্রতিবেদন কোটি কোটি মানুষের মনকে করেছে উল্লসিত! সেখানে জানানো হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবিত থাকার কথা ও লন্ডনে অবস্থানের কথা।
তার দুদিন পরেই জানুয়ারি ১০ তারিখে তেজগাঁও এয়ারপোর্টে অসংখ্য মানুষ সংবর্ধনা জানায় সেই নায়ককে যিনি এনে দিয়েছেন একটি দেশের স্বাধীনতা, যিনি মুক্তি দিয়েছেন বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্বের দরবারে। তাকে সেদিন ধন্যবাদ জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন অগণিত বাঙ্গালী।
বঙ্গবন্ধুর এই নিজের আপন মাটিতে পা রাখার পর ছুটে গেছেন সর্বস্তরের মানুষ। হাজার ভীড়ের মাঝেও একটি বার তার মুখ দেখতে গেছেন অনেকেই। তিনিও তার দেশের মানুষের উৎকণ্ঠা আর কষ্ট না বুঝে থাকেননি। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত এই দেশের কষ্ট তার মনকেও আঘাত করেছে, তাই তিনি সেদিন প্রথমবারের মত সকলের সামনে আকুল ভাবে কেঁদেছেন। তিনি আর তাঁর দেশের মানুষ জানতেন, কত কিছু হারাতে হয়েছে এই দেশটিকে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় একটি রূপকথার মত শোনালেও সেটি ছিল আসলে কঠিন এক সত্য। যেই সত্যকে জয় করেছে বাংলার মানুষ। একটি ইতিহাসের সাক্ষী ছিল সেদিন সকলে, যেটি তৈরিতে সাহায্য করেছেন বঙ্গবন্ধু।
১০ জানুয়ারির সেদিনের বঙ্গবন্ধুকে মানুষ দেখেছেন ক্লান্ত, অবসন্ন। অক্লান্ত যুদ্ধ করা মানুষটি শত অত্যাচার সহ্য করার পরও চোখে রেখেছেন সেই ৭ কোটি মানুষের কষ্টের আগুন। সেই আত্মবিশ্বাসী এক আভা তখনো মানুষ তার মধ্যে অনুভব করেছেন। কারণ তিনি ছিলেন তার নিজের দেশে, তার নিজের মানুষের সামনে।
সেদিন সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি ভাষণ দেন, লাখ লাখ মানুষের কথা বলেন যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, বলেন হাজার হাজার গ্রাম শহর পুড়ে যাওয়ার কথা, বলেন বাংলার মানুষের সাহসিকতার কথা, করেন তার আনন্দের প্রকাশ। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার পরও তার বেঁচে ফেরা ,বাংলার মানুষের কাছে সত্যিই অভাবনীয় ছিল। কারণ তাঁর জীবনের নিশ্চয়তা তখন কেউই দিতে পারেনি। তবে সকলের শুভকামনায় তিনি পুরনায় ফিরে আসতে পেরেছেন এই বাংলার মাটিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেদিনের আগমনের পর, বাঙ্গালী পেতে যাচ্ছিলো এমন একটি দেশ যা স্বাধীন, যেখানে রয়েছে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা, যেখানে রয়েছে জীবনের মুক্তি, যেখানে নেই আর কোন শোষণ বঞ্ছনা।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দ্য এশিয়ান এজ