বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রাম-জেল-জুলুম সহ্য করে ধীরে ধীরে তিনি পূর্ব বাংলার জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্ত বিজয়ে উপনীত হন। বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আপসহীন নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করে বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করেন।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু কলকাতা থেকে ঢাকা শহরে এসে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি পাকিস্তানের কাছে এমন একটি সমাজ কাঠামো প্রত্যাশা করেছিলেন, যেখানে কোনো শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না, একজন মানুষ কোনো কারণে আরেকজন মানুষকে জুলুম-নিপীড়ন করবে না। কিন্তু সদ্য স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা পূর্ব বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনগণের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। আহমদ রফিক যথার্থই বলেছেন-রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম সরব প্রকাশ। পুরোনো সম্প্রদায়ভিত্তিক অনুভব থেকে এর উদ্ভব হলেও এ অনুভবের মধ্য দিয়ে ক্রমে ক্রমে বাঙালি মুসলমানদের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসকরা ‘রাষ্ট্রভাষা’ বিতর্ক উসকে দিয়ে বাংলা ভাষাকে বাংলার মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা করে। ১৯৪৮ সালেই বাংলা ভাষাকে মর্যাদাসীন করার জন্য গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির এক সভায় বঙ্গবন্ধু বলেন-‘১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা প্রস্তাব করলে কোনো মুসলমান গণপরিষদ সদস্য তার প্রতিবাদ জানাননি। এর প্রতিবাদ করেছিলেন একজন হিন্দু, তিনি কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। এর সঙ্গে ছিল ছাত্রদের প্রতিবাদ।’