ধীরস্থির, শান্তভাবে কথা বলছিলেন তিনি। প্রতিটা শব্দ স্পষ্ট, যেন অনেক ভেবে বলা। শুরুতে যখন কথা বলছিলেন, তখন যে কারও পক্ষেই কল্পনা করা কঠিন ছিল শেষে এসে ঠিক কী ঘটতে যাচ্ছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, আবেগের বশে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। ভেবেচিন্তে, ঠান্ডা মাথায় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত এটি। বলছিলাম আবু মহসিন খানের কথা, যিনি ফেসবুক লাইভে এসে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
কেন তাঁর এমন সিদ্ধান্ত? নানা দিক থেকে নানা সম্পর্কের মানুষের প্রতারণা, স্ত্রী-সন্তানদের দূরে থাকা, ক্যানসারের মতো কঠিন ব্যাধি, ব্যবসায় লোকসান, সর্বোপরি একাকিত্ব পর্যুদস্ত করে ফেলেছিল মানুষটিকে। ডিপ্রেশনে ছিলেন নিশ্চয়ই, কাছের মানুষের সময় ছিল না তাঁর সেই খবরটুকু নেওয়ার। চারপাশে একটু লক্ষ করলেই দেখব, এমন মানুষ অনেক আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বহু মানুষকে চিনি, যাঁরা জীবনের বড় একটা অংশ একদম একাকী কাটাচ্ছেন। স্বামী বা স্ত্রী মারা গেছেন বহু বছর হলো, সন্তানেরা যার যার জীবন নিয়ে অতিব্যস্ত। বিদেশে থাকা সন্তান এতটাই ব্যস্ত যে ঈদ বা কোনো উৎসব ছাড়া সময় হয় না বৃদ্ধ মা-বাবাকে ফোন করে খবর নেওয়ার।
যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার হয়েছে বহুদিন হলো। সেই একক পরিবারও ধীরে ধীরে এক বা বড়জোর দুই সদস্যের পরিবারে এসে দাঁড়িয়েছে। মনে পড়ে একবার বিদেশে এক আত্মীয়ার বাসায় ছিলাম দুই দিনের জন্য। তাঁর স্বামী গত হয়েছেন বহুদিন। তিনি সেখানে যথারীতি একাই থাকেন। একমাত্র ছেলে অন্য স্টেটে থাকে নিজের মতো। যত দূর জানি, মায়ের থেকে দূরে থাকার জন্যই ছেলের অন্য স্টেটে যাওয়া। ভদ্রমহিলা দুঃখের চেয়ে বেশি আতঙ্কের গলায় জানালেন, কেবল অর্থের প্রয়োজন হলেই ফোন করে ছেলে, তাই ফোন ধরে ছেলের গলা শুনলেই আঁতকে ওঠেন তিনি। মায়ের থেকে দূরে নিজের আলাদা স্বাধীন জীবন বেছে নিলেও অর্থকড়ির প্রয়োজন মেটাতে এখনো মা–ই ভরসা। এ ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত, উচ্চবিত্ত পরিবারে এ ঘটনা প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে।