স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে প্রধান বাধা হিসেবে আগাগোড়া খাঁড়া রয়েছে দুর্নীতি ও পুঁজিলুণ্ঠন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে দুর্নীতি ক্রমেই বিস্তার লাভ করলেও বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে দুর্নীতি ছিল ব্যতিক্রমী আচরণ; রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে তখনো ওটা নিয়মে পরিণত হয়নি। কিন্তু জিয়াউর রহমান নিজেকে সততার পরাকাষ্ঠা হিসেবে জাহির করলেও তাঁর শাসনামল থেকে দুর্নীতি ও পুঁজিলুণ্ঠন বাড়তে শুরু করে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রক্রিয়াগুলো স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।
১৯৯১ সালে ভোটের রাজনীতি চালু হওয়ার পর গত ৩১ বছর একই প্রক্রিয়াগুলো আরও জোরদার হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর সত্তর ও আশির দশকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি ক্রমবর্ধমান হলেও ওই দুই দশকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার অতটা গুরুতর সমস্যা হয়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধুর আমলে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অভিবাসন তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, যদিও যুক্তরাজ্যে পঞ্চাশের দশক থেকেই সিলেটিদের অভিবাসন শক্তিশালী হচ্ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সও বঙ্গবন্ধুর আমলে অর্থনীতির জন্য তেমন বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেনি। ১৯৭৩ সালে প্রথম বিশ্ব তেল-সংকটের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোতে পুঁজি-সঞ্চয়ন নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। এ কারণে সেখানে নগর-উন্নয়নযজ্ঞ শুরু হয়। সস্তা শ্রমিক জোগানের অন্যতম আকর্ষণীয় সূত্র হিসেবে সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক-অভিবাসনে গতিসঞ্চার হতে শুরু করে। গত সাড়ে চার দশক ধরে এই অভিবাসনের ধারা চলমান।