স্বাবলম্বন ও সম্মিলিত উন্নয়ন সর্বশ্রেষ্ঠ অবলম্বন- এই মূলমন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে গোড়াপত্তন হতে পারে সমবায় পর্যটন সমিতির। সমবায় পর্যটন সমিতির ধারণা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে শিল্পবিপ্লব-উত্তরকালে অর্থনীতির মানদণ্ডে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি ধনবান পুঁজিপতি শ্রেণি, অন্যটি শ্রমিক ও সাধারণ বিত্তহীন শ্রেণি। শ্রমিক ও সাধারণ দরিদ্র শ্রেণিকে তখন পুঁজিপতি ও শিল্পপতিদের কৃপার ওপরে নির্ভর করে চলতে হতো। এসব প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমিক-কর্মী ও দরিদ্র জনগণ সমবায় আন্দোলন নামে এক বিশেষ মতবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়। মূলত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রায় সব কাজেই সমবায় প্রাধান্য পায়। কারণ সে ক্ষেত্রে শ্রেণি বৈষম্য তেমন পরিলক্ষিত হয় না এবং সবার সমঅধিকার প্রতিষ্ঠিত থাকে। 'দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ'- এ চিন্তাধারা থেকেই সমবায়ের জন্ম। বর্তমানে যে কোনো অর্থনীতিতে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য এরূপ গোষ্ঠীবদ্ধ প্রচেষ্টার সমবায় পর্যটনের গুরুত্ব অসীম। সমবায় দেশের অভ্যন্তরীণ মূলধন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং পর্যটনের একটি উপস্থাপনায় শ্রমজীবী মানুষের জন্য পর্যটন ধারণাটি বিকাশের রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, যার উৎপত্তি ফ্রান্সে। এ ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন গ্রিস, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। কিছু দেশে বিদ্যমান ভোক্তা সমবায় ভ্রমণ সংস্থার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এমনকি সমবায় থেকে উৎপত্তি জাপান ও কোরিয়ায় তাদের সদস্যদের জন্য সেবা প্রদানে পর্যটনসংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন এবং ভারতে সমবায় পর্যটন রয়েছে। এ ধরনের সমবায় জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে সমবায় পর্যটনকে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। যার ফলে একদিকে স্থানীয় লোকদের জন্য কর্মসংস্থান ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি, অন্যদিকে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। সমবায় পর্যটন প্রাথমিকভাবে কিছু সদস্য নিয়ে গঠিত হয়, যা একটি গ্রামবাসী সংগঠিত করে নতুন ব্যবসায়িক মডেল স্থাপন করা সম্ভব।