জাতিসত্তার অস্তিত্বগত দিক থেকে বাঙালি জাতি, জাতীয়তার চেতনা, জাতিরাষ্ট্রের ধারণা অনেক পুরোনো। প্রাচীনকাল থেকেই বহুজাতিক-বহুভাষিক জনগোষ্ঠীর বাসস্থান এ ভারতীয় উপমহাদেশ। ড. নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, ‘‘বাংলাদেশের যে ‘জন’ ও সংস্কৃতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গড়ে উঠেছে, তার প্রায় সবটাই আদি-অস্ট্রেলীয় ও আলপাইন জন-এর লোকদের কীর্তি।’’ প্রাচীন যুগে বর্তমান বাংলাদেশের অনুরূপ ভূখণ্ড-বসতির অস্তিত্ব ছিল না। বৃহত্তর বঙ্গীয় অঞ্চল (বর্তমান গোটা বাংলাভাষী অঞ্চল) একসময় বঙ্গ, পুণ্ড্র, সমতট, বঙ্গাল, রাঢ় নামীয় একাধিক স্বতন্ত্র কৌম জনপদে বিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে এসব কৌম জনপদে স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপ গড়ে ওঠে। প্রাচীন গ্রন্থ বা রচনায়, সাহিত্যে বা গাথায় রাঢ়, বঙ্গাল, সমতট জনপদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মেগাস্থিনিসের ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে এবং প্লিনি, টলেমি প্রমুখ ভিনদেশি পর্যটকের রচনায় খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে স্বাধীন বঙ্গাঞ্চলীয় রাষ্ট্র গঙ্গাহৃদির (গঙ্গারিড্ডি) বিবরণ পাওয়া যায়।