দুর্গাপূজা চলাকালে এক সকালে সংবাদপত্র হাতে নিতেই একটি বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায়। বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে মূলত কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে সব নারীকে। সেখানে স্বনামধন্য এক মডেল দুর্গাদেবীর সাজে সজ্জিত হয়ে তাঁর দশটি হাতে ধারণ করেছেন একাধারে করপোরেট নারী ও সুনিপুণা গৃহিণী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ। মডেল নারীটি তাঁর বাস্তব দুটি হাতে জড়িয়ে আছেন এক শিশুসন্তান। আর তাঁর প্রতীকী হাতগুলোতে দৃশ্যমান করা হয়েছে ল্যাপটপ, মুঠোফোন, কলম, ঝাড়ু, খুন্তি, শঙ্খসহ অনেক উপকরণ।
দেবী বেশধারী নারীর হাতে সজ্জিত যুদ্ধজয়ের এ উপকরণগুলো প্রতীকী হলেও নারীর কাঁধে সমাজের চাপিয়ে দেওয়া হাজারো দায়িত্বের বোঝাটি কিন্তু বাস্তব। বিজ্ঞাপনটি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে এর দুটি দিক নজরে পড়ে। প্রথমত, বাস্তব দুটি হাতে সন্তান তুলে দেওয়ার মাধ্যমে সন্তান ও সংসারধর্ম পালনকেই নারীর প্রধান এবং প্রথম কর্তব্য বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি কাজগুলো আনুষঙ্গিক। দ্বিতীয়ত, নারীর বাহুগুলোতে একাধারে সুগৃহিণী ও সুদক্ষ করপোরেট নারী হওয়ার নানা রসদ একযোগে তুলে দিয়ে তাঁকে সুপার উইমেন বা অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতাধর মানবী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের এই চিত্রায়ণ নারীকে কতটুকু সম্মানিত করেছে, তা বিশ্লেষণসাপেক্ষ। তবে নারীর এই চিত্রায়ণ যে তাঁর জীবনকে নানামুখী প্রত্যাশার ভারে জর্জরিত করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।