ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১০ মাস ধরে পড়ে আছে অক্সিজেন সরবরাহ সামগ্রী। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পড়ে আছে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্র ৩০০ ভেন্টিলেটর। অথচ করোনার রোগী হাসপাতালে প্রয়োজনে অক্সিজেন পাচ্ছে না। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন দুটি পৃথক প্রকল্পের অগ্রগতির পর্যালোচনার কাগজপত্রে জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসাসামগ্রী সম্পর্কে এই তথ্য পাওয়া গেছে। অবহেলা, অদক্ষতা ও নিষ্ক্রিয়তার এই নজির সৃষ্টি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠান। এক বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো উদ্যোগ তারা নেয়নি।
১১ এপ্রিল রোববার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত দুটি প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্য একাধিক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তাসহ প্রকল্প দুটির দুজন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে
দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ কারণে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। চিকিত্সার অভাবে করোনা রোগীরা মারা যাচ্ছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছে মৃত্যু। হাসপাতালে সিট নেই। ধারণক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ রোগীর ভিড়। অক্সিজেন নেই। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও মিলছে না আইসিইউ। সব মিলিয়ে করোনার চিকিত্সা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
দেশে করোনায় মৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ চিকিৎসা না পাওয়া। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৬ জেলায় আইসিইউ নেই। এসব জেলায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে চলে আসছে ঢাকায়। আবার যেসব জেলায় আইসিইউ আছে, সেসব জেলায়ও দায়িত্ব না নিয়ে চিকিত্সকরা রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক রোগী আবার নিজের ইচ্ছায় ঢাকায় চলে আসছে। বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও সিভিল সার্জনরা জেলা শহরে করোনা রোগীদের চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকায় প্রচণ্ড রোগীর চাপ। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে রাস্তায় মারা যাচ্ছে। ঢাকায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার বেশি। ১০ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও ৩৬ জেলায় আইসিইউ ইউনিট তৈরি না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও চিকিত্সা ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে চিকিত্সা ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হতো না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরাও বলছেন, প্রচণ্ড রোগীর চাপ আমরা আর সামাল দিতে পারছি না।
৫৫ বছরের শাহজাহান আলী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন। তার ১৫ লিটার করে অক্সিজেন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অক্সিজেন লেভেল কমে চলে আসে ৭৫ শতাংশে। অন্য রোগীর কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা খুলে অক্সিজেন দেওয়া হয় শাহজাহান আলীকে।
দেশে করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেডই পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হয়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যান তাদের বেশিরভাগেরই দরকার হচ্ছে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন। এর জন্য দরকার হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার। কিন্তু এই ক্যানুলার সংখ্যা দেশে একেবারেই অপর্যাপ্ত। এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকলে রোগীদের আইসিইউতে যাওয়ার হার কমানো যায়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাস: অক্সিজেন, অক্সিমিটার, নেবুলাইজারের বাজারের কী অবস্থা?
বাংলাদেশে গত কিছুদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিড চিকিৎসার উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। চিকিৎসার সুবিধার্থে অনেকেই নিজেদের বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটার, নেবুলাইজার কিনে রাখছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে আর সরবরাহ নিয়ে তৈরি হয়েছে সঙ্কট। তবে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে অক্সিজেন কিনে রাখলেও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহায়তা ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
এবার করোনা চিকিৎসার ওষুধ রেমডেসিভির রফতানি নিষিদ্ধ করল ভারত
ভ্যাকসিন রফতানি বন্ধের পর এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রেমডেসিভিরের রফতানিও নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। এক আদেশে সরকার জানায়, দেশের মহামারি পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত রেমডেসিভির ইনজেকশন ও রেমডেসিভিরের সক্রিয় ওষুধ উপাদান রফতানি বন্ধ থাকবে।