ইলিশ ধরা বন্ধে আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। এর আগে পার হয়েছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। দুই নিষেধাজ্ঞার মাঝে পত্রিকাগুলোতে ‘ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ’ ধরার খবর দেখেছি আমরা। এসব খবরের উৎস মাছের বড় মোকামগুলোর ছবি। বহু জায়গা থেকে জেলেদের সম্পদ যখন ঢাকার সোয়ারীঘাট, কলাপাড়ার মহিপুর কিংবা বরগুনার পাথরঘাটায় আড়তে পাইকারদের কাছে আসে, তখন মাছের পরিমাণ বিপুল দেখায়। সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী হয়ে ‘ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ’-এর খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে।
ইলিশে গরম ভাতের নিশ্চয়তা ঢাকা-কলকাতায় ইলিশ অভিজাত মেনু। সাধারণ জেলেদের কাছে ইলিশ মানে গরম ভাতের নিশ্চয়তা। মাছ ধরা পড়লেই কেবল চাল-নুন-তেল কেনা যায়। বাস্তবতা হলো, নদীতীরের জেলেরা এবারও খারাপ মৌসুম পার করেছেন। প্রত্যাশামতো ইলিশ মেলেনি। গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরা জাহাজের গল্প ভিন্ন রকম। কিন্তু উপকূলীয় ১০-১৫ জেলার ৪০-৪৫টি উপজেলার সাধারণ জেলেরা ভালো নেই। মহামারিতে মাছের চাহিদা কমে গিয়েছিল মে-জুনে। এর আগে-পরে জাটকা শিকার বন্ধ এবং ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর এই পেশাজীবীরা কেমন আছেন, ঢাকার সোয়ারীঘাটের ছবি দেখে অনুমান করা দুঃসাধ্য। সরকারি কার্ডধারী জেলের সংখ্যা চার লাখের অধিক। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার তাঁদের চাল-ডাল দেয়। কিন্তু ওই চাল-ডালে সংসার চলে না। জলবায়ু পাল্টে যাওয়া, নদীর পানি দূষণ, নদীমুখ ভরাট হয়ে থাকায় সাগর থেকে ইলিশ ঢুকতে না পারা, সমুদ্রসীমায় বিদেশি ট্রলারের মাছ ডাকাতি, বড় বড় ফিশিং জাহাজের নির্বিচারে পোনা মাছ নিধন—সব মিলিয়ে ছোট জেলেরা পেশা পাল্টানোর ধাক্কায় পড়েছেন। সঙ্গে আছে মৌসুমে মৌসুমে বেড়ে চলা ঋণের বোঝা। কিন্তু তাঁদের হয়ে সমস্যার বিস্তারিত কে বলবে? জেলেদের নামে সংগঠন হলেও অনেক জায়গাতেই তাতে নেতৃত্বে ট্রলারমালিকেরা। ইলিশপ্রেমী শহুরে নাগরিকেরা তাই পদ্মা, মেঘনা কিংবা তেঁতুলিয়াপারের মৎস্যজীবীদের ঘরের খবর পান না কখনো।