আমাদের অনেকের মনই পড়ার টেবিলে বসে না। শুধু তাদের জন্য আজ এক অসাধারণ ছাত্রীর গল্প বলব। ৬৭ বছর বয়সে যিনি বাংলাদেশ থেকে কানাডা গিয়েছিলেন দ্বিতীয়বারের মতো স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) পড়তে। পড়া শেষে এই করোনা মহামারির মধ্যেই ফিরে এসেছেন দেশে। ১১ জুন নিয়েছেন ভার্চ্যুয়াল সমাবর্তন। স্বামী, ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে সমাবর্তন উদ্যাপনও করেছেন তিনি। এই ছাত্রীর নাম লুবনা মারিয়াম। ১৯৭১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
নতুন দেশের সাংস্কৃতিক ভিত গড়তে যেসব মানুষ তাঁদের জীবন পথে পথে ছড়িয়ে বিলিয়েছেন, লুবনা মারিয়াম তাঁদের একজন। নৃত্যশিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি ও সমাদর পেয়েও পরে মঞ্চ ছেড়ে দেন। কারণ, তিনি চেয়েছেন, বছরের পর বছর অন্ধ অনুকরণ নয়, সংস্কারের পথ ধরে সংস্কৃতি এগিয়ে যাক। সাংস্কৃতিক শিক্ষা, গবেষণা ও পৃষ্ঠপোষকতার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। কিছুটা তাঁর মুখ থেকেই তুলে দিই। তিনি বলছিলেন, ‘সংস্কৃতি নিয়ে পাশ্চাত্যে যেসব কাজ হয়েছে, লেখালেখি ও গবেষণার জন্য সেগুলো আমাদের জানা দরকার। তাই থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ নিয়ে মাস্টার্স করতে যাই ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। বয়স বা ডিগ্রি নয়, আমার মাথায় ছিল নিবিড়ভাবে ব্যাপারগুলো জানার প্রয়োজন।
তাই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে এক বছরের জন্য ছুটি নিয়েছিলাম।’ এক বছরের কোর্স করতে গিয়ে ছয় মাস বিরতি নেন তিনি। দেশে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক নৃত্য উৎসবটি আয়োজনের জন্য সংগঠিত করতে হয়েছে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের। সেই কর্মযজ্ঞ সফলভাবে শেষ করে তিনি আবার গিয়ে বসেন পড়ার টেবিলে। এ সময় অবশ্য তিনি আরেকটা বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। নিজের হাতে গড়া ২৬ বছরের পুরোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন সাধনা ও নাচের স্কুল কল্পতরুকে তুলে দিয়ে যান একদল তরুণের হাতে। কেমন চালিয়েছিলেন তাঁর তরুণ সংগঠকেরা? ভীষণ আত্মতৃপ্তির সঙ্গে তিনি জানালেন সে কথা। ‘এটা ছিল আমার জন্য অনেক বড় এক নিরীক্ষা।
দীর্ঘদিন পর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে একটু অবকাশ নিলাম। তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম দুটি প্রতিষ্ঠান। চ্যালেঞ্জটা নিয়ে দেখলাম, আমি না থাকলে সংগঠনগুলো তারা চালিয়ে নিতে পারবে, নাকি বন্ধ করে দিতে হবে! দেখলাম, তারা সফলতার সঙ্গে কাজটা করতে পেরেছে।