করোনা পরীক্ষায় এখনো তলানিতে বাংলাদেশ

প্রথম আলো প্রকাশিত: ৩০ জুন ২০২০, ১১:১২

দেশে কোভিড-১৯ শনাক্তে এখনো প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষা কম হচ্ছে। শুধু যে পরীক্ষা কম হচ্ছে তা নয়, এ ক্ষেত্রে নতুন রোগী বাড়ছে এমন ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে।

শুরু থেকেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেশে পরীক্ষা ক্রমে বাড়ানো হলেও তা এখনো পর্যাপ্ত নয়। পরীক্ষা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে এবার কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষার ওপর ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এতে পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।


সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু থেকেই পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯–এর টিকা বা ওষুধ কোনোটাই আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন ‌পরীক্ষা করে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত করা, তাকে আইসোলেশনে (বিচ্ছিন্ন করা) নেওয়া এবং আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) নেওয়াটাই
হচ্ছে সংক্রমণ ঠেকানোর মূল উপায়।

সর্বশেষ সাত দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত এমন ১২টি দেশের তালিকা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কয়েক সপ্তাহ ধরে এই তালিকায় আছে বাংলাদেশও। তাতে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। এই তালিকায় থাকা দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, চিলি, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, পেরু, সৌদি আরব ও কলম্বিয়া।

এই দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, রোগী শনাক্তে বাংলাদেশে তুলনামূলক কম পরীক্ষা হচ্ছে, কিন্তু আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে বেশি। প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় ১০টি দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু মেক্সিকোতে বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যায় ৪ হাজার ৫৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

অন্যদিকে পরীক্ষার বিপরীতে পজিটিভ বা আক্রান্ত শনাক্তের হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে। অর্থাৎ সংক্রমণ বাড়ছে এমন ১২টি দেশের আটটিতেই বাংলাদেশের চেয়ে শনাক্তের হার কম। প্রতিটি সংক্রমণ শনাক্তে আটটি দেশেই বাংলাদেশের চেয়ে বেশিসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক, রোগতত্ত্ববিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দেশে পরীক্ষার সক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে এখনো চাহিদার তুলনায় পরীক্ষা কম হচ্ছে। যত বেশি পরীক্ষা হবে তত সুবিধা হবে। তবে হয়তো সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হবে না। লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের আলাদা করার ব্যবস্থা করা যায়।

সংক্রমণ বাড়ছে এমন ১২টি দেশের মধ্যে ১০টিতেই জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড
গত ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর শুরুর দিকে পরীক্ষা ছিল একেবারে সীমিত। তখন মূলত বিদেশফেরত ব্যক্তি এবং তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের যাঁদের উপসর্গ দেখা যেত তাঁদেরই পরীক্ষা করা হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সংক্রমণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এ অবস্থায় এপ্রিলের মাঝামাঝিতে নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র, পরীক্ষার সংখ্যা ও পরিধিও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন বিভিন্ন জায়গায় ৬৮টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে তা এখনো পর্যাপ্ত নয়।

সংক্রমণের ধারা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন রোগী শনাক্ত করতে যদি ১০ থেকে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায়, তা হলে পরীক্ষা পর্যাপ্ত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একজন রোগী শনাক্তে ৫ দশমিক ২৯টি নমুনা পরীক্ষা করতে হয়েছে।

শুরু থেকে বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলের করোনাভাইরাস সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য রাখছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন রোগী বাড়ছে এমন ১২টি দেশের মধ্যে শুধু তিনটি দেশে একজন রোগী শনাক্তে বাংলাদেশের চেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। সে দেশগুলো হলো ব্রাজিল, মেক্সিকো ও চিলি। এই তালিকায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে একজন রোগী শনাক্তে ১৫টি এবং পাকিস্তানে ৬টির বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এদিক থেকে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা হচ্ছে রাশিয়ায়। দেশটিতে একজন রোগী শনাক্তে ৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকা বাদে বাকি আটটি দেশেই অবশ্য পরীক্ষা অপর্যাপ্ত।

পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার বাংলাদেশে তুলনামূলক বেশি। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে শনাক্তের হার কমার কথা। তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রোগী শনাক্তের হারও বাড়ছে। শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট পরীক্ষার বিবেচনায় দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। মে মাসের শেষ দিক থেকে প্রতিদিন শনাক্তের হার ২০-২২ শতাংশ। ব্রাজিল, মেক্সিকো ও চিলিতে পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণ শনাক্তের হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ভারত ও পাকিস্তানসহ অন্য আটটি দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার বাংলাদেশের চেয়ে কম।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য, ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে। তবে সেটা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পরীক্ষা আরও বাড়াতে পারলে ভালো হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায়ও এখনো বাংলাদেশে পরীক্ষা কম হচ্ছে। এত দিন পরীক্ষা ছিল বিনা মূল্যে। এখন পরীক্ষার জন্য ফি নির্ধারণ করায় অনেকে হয়তো পরীক্ষা করাবেন না।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us