'মা ওরা আমাদের মেরে ফেলবে।' গত ৪ জুন ঠিক এ ভাবেই আর্তচিৎকার করেছিল শিশুটি। মুখোশ পরা কয়েকজন ততক্ষণে উঠে পড়েছে তাদের নৌকোয়। ছুরি দিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে নৌকোর ইঞ্জিন। ফুটো করে দেওয়া হচ্ছে মেঝে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে। এই সবটাই ঘটছে সমুদ্রের মাঝখানে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতোও কেউ নেই। দীর্ঘ দিন ধরেই তুরস্কের পথ ধরে ইউরোপে পালাচ্ছেন সিরিয়া, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তুরা। যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে এটাই তাঁদের পালানোর একমাত্র পথ।
তুরস্কে দালালদের টাকা দিলে গ্রিসের নৌকোয় ওঠার অনুমতি মেলে। সেই নৌকো করেই ইউরোপে নতুন স্বপ্নের খোঁজে পাড়ি দেন উদ্বাস্তুরা। গত ৪ জুনও সেভাবেই নৌকোয় চেপে বসেছিলেন অনেকে। ভূমধ্যসাগর দিয়ে নৌকো যখন গ্রিসের জলে ঢোকে তখনই ঘটে বিপত্তি। হঠাৎই সকলে দেখতে পান, দূরে দাঁড়িয়ে আছে কোস্ট গার্ডের একটি জাহাজ। আর সেখান থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে আরেকটি নৌকো। চার-পাঁচজন মুখ ঢাকা ব্যক্তি সেই নৌকো করে চলে আসেন উদ্বাস্তুদের নৌকোর কাছে। রুল দিয়ে মারতে মারতে তারা উঠে উদ্বাস্তুদের নৌকোয়। নষ্ট করে দেওয়া হয় ইঞ্জিন, ভেঙে দেওয়া হয় সব কিছু। প্রাণ বাঁচাতে একের পর এক উদ্বাস্তু সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে শুরু করেন। এই সবটাই ঘটেছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপের কাছে।
ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে এসেও তমসাচ্ছন্ন যাঁদের জীবন দীর্ঘ দিন ধরে জলপথে আসা উদ্বাস্তুদের নিয়ে কাজ করছে একটি সংস্থা। জলে উদ্বাস্তুরা সমস্যায় পড়লে ওই সংস্থাটি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন পায়। গোটা ঘটনাটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা তাদের কাছে আছে। তাদের দাবি, সব কিছু খতিয়ে দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঘটনাটি গ্রিসের কোস্ট গার্ডরাই ঘটিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি প্রমাণ করার মতো কোনও তথ্য নেই। কারণ যারা উদ্বাস্তুদের নৌকো আক্রমণ করেছিল, তারা কেউ ইউনিফর্মে ছিল না। মুখ ঢাকা ছিল। যে নৌকোটি করে তারা এসেছিল, সেই নৌকোটিতেও কোনও সংস্থার নাম লেখা ছিল না।