করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে এপ্রিল ও মে মাসে সিঁধেল চুরির ঘটনা ঘটেছে ২২৯টি। আর চুরির ঘটনা ঘটেছে ৬৮৮টি। তবে এসব অপরাধের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব অপরাধের পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনা রয়েছে অসংখ্য। সঙ্গে রয়েছে টানা পার্টির দৌরাত্ম্য।
মেট্রোপলিটন এলাকায় বিশেষ করে রাজধানীতে গ্রিল কেটে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন থানার দায়িত্বশীলরা। এসব অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কম নজরদারিকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর দায়িত্বশীলরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সামনের সারিতে থেকে কাজ করছে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী। লকডাউন থাকা বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। তারপরও যেসব ঘটনা ঘটছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
তাদের হিসেব অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে সারাদেশে ডাকাতির ঘটনা ১০টি, দস্যুতা ৩২টি, দ্রুত বিচার আইনে অপরাধ ৩৭টি, সিঁধেল চুরি ৯৩টি, চুরি ২৯৩টি অপরাধসহ মোট মামলা হয়েছে ৯ হাজার ৯৮টি। মে মাসে এসব অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। ডাকাতি ১১টি, দস্যুতা ৫৯, দ্রুত বিচার আইনে অপরাধ ৪৪টি, সিঁধেল চুরি ১৩৬, চুরি ৩৯৫টিসহ মোট মামলা হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার।
চুরি, ছিনতাই বা সিধেঁল চুরির মতো অনেক ঘটনা সংশ্লিষ্ট থানা পর্যন্ত যায় না। গত ১৯ জুন কুমিল্লার লাকসামের গোবিন্দপুর গ্রামে একরাতে ১১টি বাডিতে সিঁধেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। সবগুলো বাড়িতে চোরেরা সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করেছে। নিয়ে গেছে, মোবাইল ফোন, নগদ টাকাসহ অন্যান্য জিনিস।
তবে একরাতে ১১টি বাড়িতে সিধেঁল চুরির ঘটনায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা চুরির ঘটনা শুনেছি। কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেনি। তবু আমরা এই চক্রকে গ্রেফতারে কাজ করছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
লকডাউন পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সেসব প্রতিষ্ঠানেও চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৭ জুন খুলনার সরকারি মডেল মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের জানালার গ্রিল কেটে ২১টি ল্যাপটপসহ অন্যান্য জিনিস চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন শেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুই জায়গায় গ্রিল কেটে চোর ভিতরে ঢুকেছিল। কম্পিউটার ল্যাবের ২১টি ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। আমরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। এখনও কাউকে গ্রেফতার বা ল্যাপটপগুলো উদ্ধারের কোনও খবর জানায়নি পুলিশ।
ঢাকায় একের পর এক ঘটছে গ্রিল কেটে চুরি
করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে। এতে ফাঁকা পড়ে আছে বাসা বাড়ি। আর এই সুযোগটি নিচ্ছে গ্রিলকাটা চোর চক্র। নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই এই সময়ের মধ্যে গ্রিল কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩ জুন ফ্ল্যাটের গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে বাসায় কেউ নেই দেখে সেই বাসাতেই তিনদিন থাকে এক চোর। তিনদিন পর বাসার মালিক বিদেশে থাকা অবস্থায় সিসিটিভিতে চোরকে দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানান। পুলিশ ১৩ জুন গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ওই বাসা থেকে চোরকে গ্রেফতার করে। নাম মো. মাসুম(২১)।
গুলশান পুলিশ জানিয়েছে, মাসুম একজন পেশাদার চোর। গ্রিল কেটে বিভিন্ন বাসায় ঢুকে চুরি করতে গিয়ে একাধিকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল। তবে জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ শুরু করে।
একই কায়দায় গ্রিল কেটে গুলশানের বারিধারার পার্ক রোডের একটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে ৮ জুন রাতে। কোটি টাকা মূল্যের ঘড়ি ও আইফোন চুরি হয়। ২৪ জুন চুরির ঘটনায় মিজান(২০) নামে এক চোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া গ্রেফতার করা হয় আরও দুজনকে। পাঁচটি ঘড়ির মধ্যে তিনটি ঘড়ি ও আইফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীতে বেপড়োয়া ছিনতাইকারী ও টানা পার্টি, শনাক্তে বিপত্তি মাস্ক
করোনা পরিস্থিতির কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষের চলাচল অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম থাকে। এই নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৎপর রয়েছে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যরা। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেকারে চড়ে এসব চক্রের সদস্যরা নগরীর বিভিন্নস্থানে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মুখে মাস্ক পড়ে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় অংশ নেওয়া অপরাধীদের শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
গত ১৯ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার সড়ক হয়ে রিক্সায় মোহাম্মদপুর ফিরছিলেন লাইজু ও লিমা। পেছন থেকে এই প্রাইভেটকার এসে তাদের রিক্সার পাশে এসে থামে। এবং ডান পাশে বসা লিমার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দেয়। টানে রিক্সা থেকে ছিটকে পড়েন লিমা তবে ব্যাগ ছাড়েননি।
সঙ্গে থাকা লাইজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাস্তায় তখন বেশ কয়েকটি গাড়ি চলছিল। হঠাৎ একটি গাড়ি থেকে একজন আমার বোনের ব্যাগ ধরে টান দেয়। লিমা ব্যাথা পেয়েছে কিন্তু ব্যাগ নিতে পারেনি। আমরা একটি ফার্মেসিতে ট্রিটমেন্ট করে বাসায় ফিরেছি।