লাখ ছাড়ানো শনাক্তের সংখ্যা যেসব বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২০, ১৯:০২
বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল গত ৮ই মার্চ, আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত ১০৪ দিনে এই ভাইরাসে সংক্রমিতদের শনাক্তের সংখ্যা সব মিলিয়ে এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশীদের একটি, ভারতে শনাক্তকৃত আক্রান্তের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে ১০৯ দিনের মাথায়।
বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের শনাক্ত করার হার এভাবেই ধীর গতিতে বাড়ছে।
সে হিসেবে বাংলাদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পিক বা সর্বোচ্চ শিখরে যেতে আরও ৪২ দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
আবার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর পর করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থানের স্থায়িত্ব একটা দীর্ঘ সময় ধরে হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন।
বাংলাদেশে আক্রান্তের হার যেভাবে বেড়েছে গত ৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পড়ার পর প্রথম কয়েকদিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল এক অংকের ঘরে।
পরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শনাক্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়তে থাকে।
প্রথম শনাক্ত হওয়ার প্রায় এক মাসের মাথায় ৯ই এপ্রিল একদিনে শতাধিক ব্যক্তি করোনাভাইরাস বহন করছেন বলে শনাক্ত হন। এরও প্রায় এক মাসের মাথায় গত ১১ই মে একদিনে শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এভাবে শনাক্তের মোট সংখ্যা মোট ৫০ হাজার ছাড়ায় গত ২রা জুন। অর্থাৎ বাকি ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে শেষের ১৬ দিনে।
সামনে দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে, আর এভাবে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ক্রমেই সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, "জুন মাসের প্রথম দিন থেকেই গ্রাফটা খুব খাড়াভাবে ওপরের দিকে উঠছে। এটা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তে থাকবে।"
ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে শনাক্তদের সংখ্যার দিক থেকে প্রথম ২০টি দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে বাংলাদেশ।
ইতালি বা ব্রাজিলের কয়েকটি শহরে যেভাবে সংক্রমণের বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছিল, বাংলাদেশেও কোন একটি জনপদে এমন সংক্রমণের বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আরেকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশ অনেক ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে স্বল্প আয়ের মানুষেরা খুব গাদাগাদি করে থাকেন। এমন পরিবেশে আক্রান্তের সংখ্যায় বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায় - ব্রাজিলে সাও পাওলো বা রিও ডি জেনিরোতে যেমনটা দেখা গেছে।"
বাংলাদেশের পিক টাইম কবে আসবে ব্রিটেনে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পিক টাইম প্রায় ৪২ দিন ধরে স্থায়ী ছিল।
বাংলাদেশে এর চাইতেও বেশি সময় ধরে এই পিক টাইম স্থায়ী হতে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজির আহমেদ।
ইউরোপের আরেক দেশ ইতালিতে পিক টাইমের স্থায়িত্ব ছিল আরও কম। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন দ্রুত গতিতে বেড়েছে, তেমনি দ্রুত গতিতে সেটা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে আবার বেশ দ্রুত নেমেও এসেছে।
দেশটিতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩০শে জানুয়ারি।
মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যার গ্রাফ হু-হু করে উপরের দিকেই উঠতে থাকে। মার্চের শেষের দিকে শনাক্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
এরপর ধীরে ধীরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে আসতে থাকে।
অর্থাৎ প্রথম কোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে ধীরে ধীরে নেমে আসা, ইতালিতে এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে দুই মাসের মধ্যে।
কিন্তু বাংলাদেশে প্রথম শনাক্তের পর তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখানে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও উর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশে আক্রান্তের হার কবে নাগাদ সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবে, সেটা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এই চূড়ান্ত পর্যায় কখন আসবে এবং সেটা কতো সময় ধরে স্থায়ী হবে সেটা নির্ভর করবে, কতো টেস্ট করা হচ্ছে, মানুষ কতোটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে, সরকার কতোটা কঠোরতা আরোপ করছে এবং নজরদারি করছে - এসবের ওপর।
লকডাউনের কড়াকড়ি, যথাযথ আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে চীন ও ইতালি দ্রুত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দমন করতে সক্ষম হয়েছে।