ক্রিকেট কখনও কখনও বড্ড নিষ্ঠুর। সেই নিষ্ঠুরতার রূপ মাশরাফি মুর্তজার চেয়ে বেশি দেখেছেন খুব কম ক্রিকেটারই। ক্যারিয়ারজুড়ে চোট ছায়াসঙ্গী হতে থাকা এই পেসার সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা দেখেছেন ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে।
ইনজুরিতে পড়লেও সুস্থ হয়ে বিশ্বকাপ দলে ফেরার সময় তার হাতে যথেষ্ট ছিল। নির্বাচকরা চাইলেই দেশসেরা এই পেসারকে সুযোগটা দিতে পারতেন। কিন্তু সেটি হয়নি। বেদনাহত মাশরাফি নিজের আবেগ ধরে রাখতে না পেরে সে সময় ভেঙে পড়েছিলেন কান্নায়।শনিবার ছিল তামিম ইকবালের লাইভ আড্ডার শেষ পর্ব। শেষটা রাঙাতে তিনি অতিথি করে এনেছিলেন মাশরাফি, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহকে।
সেই আড্ডাতেই তামিম ২০১১ বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ তোলেন। টাইম মেশিনে চেপে মাশরাফি যেন ফিরে গেলেন ৯ বছর আগের সেই দিনগুলোতে, ‘২০১১ সালের বিশ্বকাপ ঘরের মাঠে, অনেক আগে থেকেই মনের মধ্যে বিশ্বকাপ ঘিরে নানা রকম রোমাঞ্চ তৈরি হয়েছিল। নিজের দেশে বিশ্বকাপ খেলবো, একটা স্বপ্ন ছিল। বিশ্বকাপের প্রায় দুই মাস আগে ঢাকা লিগ খেলতে গিয়ে আমার লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলেও একবারের জন্যও ভাবিনি আমি বিশ্বকাপে থাকবো না।মাশরাফি না থেমেই বলতে থাকেন, ‘শ্রীলঙ্কায় ডেভিড ইয়ং আমাকে দেখলেন। উনি আমাকে বললেন, খেলতে সমস্যা নেই। কিন্তু ঝুঁকি থাকবে যে, খেলতে গেলে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। যদি সহ্য করে খেলতে পারি তাহলে সমস্যা নেই। আমি রাজি হয়েছিলাম। ডাক্তার সেভাবেই রিপোর্ট পাঠালো। তারপরও আমাকে নির্বাচকরা নেয়নি। আমার আফসোস হয়তো আছে। কিন্তু কোনও অভিযোগ নেই। আমি কাউকে দোষারোপ করিনি, করবও না।’বিশ্বকাপে সুযোগ পাননি বলে একঅর্থে স্ত্রীকে বাঁচাতে পেরেছিলেন মাশরাফি। নিজেই জানালেন সেই কথা, ‘একটা জিনিসি ভাবতে ভালো লাগে আমি যদি খেলতাম, আমার সমস্যা হলেও হতে পারতো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে আমার স্ত্রীকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা হয়েছিল। জন্ডিসে আমার স্ত্রী বিলিরুবিন কমে গিয়েছিল। এসব ক্ষেত্রে ৯৯ ভাগ রোগী বাঁচে না। রাতটা পার করেই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে, তখন হুমায়ারা মাত্র সাত মাসের। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি ম্যাচে থাকতাম হয়তো আমার স্ত্রীকে আমি হাসপাতালে নিতে পারতাম না।