‘লেট বেটার দেন নেভার’—এ ইংরেজি প্রবাদটি অবশেষে সত্য হলো মার্কিন-তালেবান শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে। কষ্টকর প্রসববেদনা শেষে বিশ্বস্ত মার্কিন কূটনৈতিক জালমে খলিলদাদ ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ এক ‘অনিশ্চিত ও অবিশ্বস্ত’ চুক্তি স্বাক্ষরে সক্ষম হয়েছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর নিশ্বাস নিতে না নিতেই উভয় পক্ষ চুক্তি ভঙ্গের কারণ ঘটায়। তালেবানরা জাবুল প্রদেশের ২৪ জন আফগান নিরাপত্তা রক্ষীকে হত্যা করে। এর জবাবে মার্কিনিরা আবারও বোমা বর্ষণ করে। চিরস্বাধীন দেশটি এখন চির অশান্তির দেশে পরিণত হয়েছে সাম্রাজ্যবাদের কুচক্রে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি শতধাবিভক্ত। সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টদের মধ্যেও দৃশ্যমান অনৈক্য। সর্বত্রই অরাজকতা, অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার তালেবান ও মার্কিন উভয় পক্ষের কাছেই শিখণ্ডী সরকার অচ্ছুত অথবা অপ্রয়োজনীয়। সাত সমুদ্র তেরো নদী পারের মার্কিন শক্তি প্রাসঙ্গিক কিন্তু বাড়ির কাছের আরশিনগরের সরকার অপ্রাসঙ্গিক। একসময়ে পরাক্রান্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও জার সাম্রাজ্যবাদকে বিপুল বিক্রমে মোকাবিলা করে স্বীয় স্বাধীনতা অক্ষত রাখতে পেরেছে আফগানিস্তান। সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদকে বিতাড়ন করতে পেরেছে। এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কোন্দলে বিপর্যস্ত সে দেশ। ২০০২ সাল থেকে আজ ২০২০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত সময়ে মুক্তিকামী আফগান জনগণ প্রতিদিন যুদ্ধ করছে। প্রতিদিন প্রতি ক্ষণে বোমা বর্ষিত হয়েছে শহর-বন্দরে, কাবুল কিংবা কান্দাহারে। রক্ত ঝরছে হিন্দুকুশের শিখর থেকে আমুদরিয়ার কালো জলে। একটি বেসরকারি হিসাবমতে, বিগত ১৮ বছরের যুদ্ধে ২ লাখ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। বাস্তুহারা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। এই লাখ লাখ মানুষ বাস করছে সীমান্তের ওপারে ইরান অথবা পাকিস্তানের মাটিতে। ফিলিস্তিনের পরে সম্ভবত তারাই দ্বিতীয় বৃহত্তম উদ্বাস্তু জাতি। তাদের প্রতিপক্ষের ক্ষতির পরিমাণও নেহাত কম নয়। মার্কিন সেনা নিহতের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এ পর্যন্ত ব্রিটেনের ৪৪৫। ন্যাটোর ১ হাজার ৪০০। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। আর্থিকভাবে মার্কিন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯৭৫ বিলিয়ন ডলার। এটি হচ্ছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর সবচেয়ে দীর্ঘায়িত যুদ্ধ।