বৃটিশ কাউন্সিলের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বাংলাদেশের প্রখ্যাত ফটোসাংবাদিক ড. শহিদুল আলমকে ভিসা দেয়নি ভারত। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অন্য সব অতিথিদের ভিসা দেয়া হলেও শুধু প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তার ভিসা আবেদন। কিন্তু কেন? তা নিয়ে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। শহিদুল আলম মনে করেন, তিনি জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। দৃশ্যত সে কারণেই তার ভিসা আবেদন প্রত্যখ্যান করেছে দিল্লি। তবে কি কারণে ভিসা দেয়া হয়নি তার কারণ জানাতে রাজি হয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সুহাসিনী হায়দারের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পর শহিদুল আলম বলেছেন, এই উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান একটি নিয়মিত (রুটিন) বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের সময় সরকারের সমালোচনা করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। শহিদুল আলম বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরে মানবাধিকার নিয়ে করা তার মন্তব্যের জন্য ভারতে সমস্যায় পড়তে পারতেন বলে মনে করেন তিনি। শহিদুল আলম বলেন, এটা সবারই জানা বিষয়, যেকেউ যদি সাংবাদিক হিসেবে ভিসার জন্য আবেদন করেন তাকে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে কঠোরতার মুখোমুখি হতে হয়। যেসব দেশ নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করে তাদেরকে মিডিয়ার প্রতি এতটা শত্রুতাপ্রবণ হওয়া অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের সবারই উচিত আমাদের সরকারকে জবাবদিহির আওতায় রাখা। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অবাধ ও শৃংখলমুক্ত মিডিয়া হলো সর্বোত্তম সুযোগ। এক লিখিত বক্তব্যে দ্য হিন্দুকে এসব জানিয়েছেন তিনি। দ্য হিন্দু লিখেছে, বৃটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ‘সেরেনডিপিটি’ নামের একটি আর্ট উৎসবে যোগ দেয়ার কথা ছিল শহিদুল আলমের। কিন্তু ভিসা না পাওয়ার কারণে তিনি স্কাইপ মাধ্যমে যোগ দিয়েছেন ওই অনুষ্ঠানে। এ সময় তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কিনা তা বলার উপায় নেই তার। এ সময় তিনি অন্য সহকর্মীদের বিষয় তুলে ধরেন, যারা ভিসার আবেদন করেছিলেন এবং তারা ‘মাল্টিপল-এন্ট্রি’ ভিসা পেয়েছেন কম সময়ের মধ্যে। অন্যদিকে এ বছরের শুরুর দিকে সাংবাদিকতা বিষয়ক একটি পুরস্কার জেতেন তিনি মুম্বইয়ে। এ জন্য তাকে ভারত ভিসা দিয়েছিল। তাকে ওই সময় ফ্লাইটের মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে ‘শর্ট-এন্ট্রি’ ভিসা দেয়া হয়েছিল অনেক জটিলতার মধ্যে। কিন্তু এবার তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আমি প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট সহ আবেদন করেছিলাম। তবে তিনি বুঝতে পেরেছেন, যখন থেকেই তিনি কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মন্তব্য করেছেন তখন থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। এসব মন্তব্যে তাকে ভারতবিরোধী বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনে গত ২৭ শে আগস্ট ভিসার জন্য আবেদন করেন শহিদুল আলম। এই আবেদন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াকরণ করার কথা। ৫ই সেপ্টেম্বর তিনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে যান। এ সময় জানানো হয়, তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানতে চায় দ্য হিন্দু। জবাবে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, কি কারণে ভিসা দেয়া হয়নি প্রতিটি ভিসা আবেদনের বিপরীতে এর কারণ বলা সম্ভব নয়। শহিদুল আলমের আবেদনের বিষয়ে ওয়াকিবহাল এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, কোনো দেশই এসব বিষয়ে জানায় না। তিনি আরো বলেন, নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মধ্যে ভিসা আবেদন যাচাই করা হয়। ওদিকে ‘সেরেনডিপিটি’ উৎসবের আয়োজকরা বলছেন, শহিদুল আলমকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কা, নেপাল সহ অন্য দেশগুলোর আমন্ত্রিত অতিথিরা যোগ দিয়েছেন। আয়োজকদের একজন বলেছেন, আমরা যাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম তারা সবাই এসেছেন। শুধু শহিদুল আলমের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তিনি আশা করেন, এ বছরের শেষের দিকে আর একটি অনুষ্ঠান আছে। তাতে যোগ দিতে পারবেন শহিদুল আলম। এ বিষয়ে মন্ত্রব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বৃটিশ হাই কমিশন। তারা বলেছে, ওই অনুষ্ঠানের একটি ‘ভেন্যু পার্টনার’ ছিল বৃটিশ কাউন্সিল। ওই আয়োজক শহিদুল আলম প্রসঙ্গে বলেছেন, যখন তিনি কারাবন্দি ছিলেন তখন সারাবিশ্বের মানুষ, ভারতের বহু মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাকে ভারতে আসার সুযোগ দেয়া হয়নি এবং বক্তব্য রাখতে দেয়া হয় নিÑ বিষয়টি খুব বাজে হয়েছে। উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য, সরাসরি সম্প্রচারের কারণে কমপক্ষে ১০০ দিন জেল খাটেন ড. শহিদুল আলম। এরপর গত বছর বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অব দ্য ইয়ার হিসেবে মনোনীত হন তিনি। অনেক সাহসী কাজ করেছেন তিনি। সাবেক স্বৈরাচার জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ১৯৮০র দশকে রিপোর্ট কাভার করেছেন। পরে তিনি শিল্পীদের জন্য দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার শিল্প পদক লাভ করেন।