৮ম শ্রেণি পড়ুয়া এক ছাত্রী ধর্ষণ মামলার সাক্ষী ছিল সীমার মা তাছলিমা বেগম। সাক্ষ্য না দেয়ার জন্য আসামিরা তাকে বহুবার চাপ প্রয়োগ করেছেন। এমনকি রাতের আঁধারে বাড়িতে গিয়েও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায় তাছলিমাকে। কোনো কিছুতেই পিছু হটেনি সে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু কে জানতো যে অন্যের ধর্ষণের সাক্ষী হতে গিয়ে নিজের বুকের ধন আদরের মেয়েকে নরপশুদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হতে হবে, এমনকি ধর্ষকদের হাতে মরতে হবে? এ ঘটনা ২০১৮ সালের ২৪ই অক্টোবর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সামুদাফাৎ গ্রামে ঘটেছিল। গভীর রাতে ঘরের মধ্যে ঢুকে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে তাসলিমা বেগমের মেয়ে সীমাকে একই এলাকার সুমন চৌকিদার ও দানেশ চৌকিদার পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে নৃসংশভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক রাঙ্গাবালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পাল্টে যায় ঘটনার রহস্য। পটুয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১৯ সালের ১৯শে জানুয়ারি রাঙ্গাবালী থানায় গণধর্ষণ মামলা রেকর্ড হয়। এই মামলায় বাদী হয় নিহত সীমার মা তাছলিমা বেগম। বর্তমানে মামলার এই বাদী নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং মামলা উঠিয়ে নিতে বাদীকে হুমকি দিয়ে আসছে। যার কারণে জীবন শঙ্কায় মামলার বাদী পরিবারকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে এমন অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মামলার বাদী। গত ২৫শে জুলাই পটুয়াখালী প্রেস ক্লাবে মামলার বাদী ও নিহতের মা তাছলিমা বেগম সংবাদ সম্মেলন করে আইনি সহায়তার দাবি জানান।সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঘটনার সূত্রপাত ২০১৭ সালের ১৪ই এপ্রিল রাতে একই এলাকার ১৪ বছরের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেয় সুমন চৌকিদার ও দানেশ চৌকিদার। এ ঘটনায় পরের দিন রাঙ্গাবালী থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় ২নং সাক্ষী ছিলেন তাছলিমা বেগম। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে সাক্ষ্য দেয়। যার কারণে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তার মেয়ে সীমা আক্তার (১৪)কে প্রতিনিয়ত মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে অশ্লীল ভাষায় বিরক্ত করতো। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ২৪শে অক্টোবর রাতে ঘরের মধ্যে ঢুকে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে তার মেয়ে সীমাকে আসামি সুমন চৌকিদার ও দানেশ চৌকিদার পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে নৃসংশভাবে হত্যা করে। নিহত সীমা আক্তার রাঙ্গাবালী হামিদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। সীমা হত্যার ঘটনায় রাঙ্গাবালী থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। পরে পটুয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১৯ সালের ১৯শে জানুয়ারি রাঙ্গাবালী থানায় মামলা রেকর্ড হয়। এতে আসামি ছিল- সুমন চৌকিদার (২২), দানেশ চৌকিদার (২৭), সেরাজুল চৌকিদার (৫০), মো. নবীনুর (৪৫), ছাদের চৌকিদার (৬০), ইমরান চৌকিদার (২১), রাকিব চৌকিদার (২০), মোফাজ্জেল হোসেন (৪০) সহ ৮ জন।এ মামলার পর আসামিরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। এমনকি বাদীর স্বামী ও সন্তানদের খুন-জখমের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায় আসামিরা। উল্লিখিত আসামিরা চলতি বছরের পহেলা জুলাই তাছলিমা বেগমের ঘরে ঢুকে তার স্বামী ও সন্তানকে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ তাছলিমা বেগমের। এ ঘটনায় ৩রা জুলাই গলাচিপা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি আবেদন করলে আদালত অভিযোগটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রাঙ্গাবালী থানাকে আদেশ দেন। কিন্তু তাছলিমার অভিযোগ পুলিশ এখনো মামলাটি রেকর্ড করেনি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে এবং মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তার মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাছলিমা বেগম।