বাংলাদেশ একটি ঘূর্ণিঝড় থেকে নিজকে সবে রক্ষা করেছে, কিন্তু এই দেশে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন সংকট গভীরতর হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মে মাসের শুরুতে সাইক্লোন ফণী পূর্ব ভারতে আঘাত হেনেছিল , বাংলাদেশে যাওয়ার আগে ৪২ জনকে হত্যা করেছিল। এখানে প্রায় ১৭ জন নিহত হয়েছে- পূর্ববর্তী সাইক্লোনগুলোর চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কম।সৌভাগ্যক্রমে একটি মিশ্র অবস্থার কারণে এবারে বেঁচে যাওয়া। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাংলাদেশ ঢুকে পড়ার কারণে ঝড়টি শক্তি হারায়। আর দুর্যোগ রুখতে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ছিল, বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. সালেমুল হক।তিনি বলেন, ‘আমরা জীবন বাঁচাতে খুব ভালো, আমি বলব বিশ্বের অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে ভালো’, তিনি আরো ব্যাখ্যা করেন। ‘কিন্তু আমরা যা বন্ধ করতে পারি না, সেটা হলো ক্ষতি- এটা অপরিহার্য। মানুষের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মানুষের বিরাট অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি ঘটে।’সারা দেশে ১৩ হাজার ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। চাঁদপুর, মধ্য বাংলাদেশের জনপদ, সেখানে অন্তত ১শ’ জন আশ্রয়ের ভরসা ছাড়াই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েন কৃষকরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের মতে, প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমি বন্যায় তলায়। এবং ১৮শ’ হেক্টর ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে।যদিও কিছু ধরনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায়, কিছু ক্ষেত্রে পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী, আর কখনো তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে যায়। ২০০৭ সালে সাইক্লোন সিডর দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর কিছু অংশ তার থেকে রেহাই পায় না। সিডর ১৫ হাজার মানুষের প্রাণ কাড়ে। আর হাজার হাজার মানুষকে গৃহহীন করে। বেঁচে থাকা বেশিরভাগই হয় রাজধানী ঢাকা, বা অন্যান্য শহরে কোনো বিকল্প ছাড়াই চলে যাচ্ছে।১০ বছরেরও বেশি সময় পরে, এখনো উদ্বাস্তু স্রোতের রেশ রয়ে গেছে। ২০১৭ সালে বরিশাল থেকে ১শ’ কিলোমিটার দূরে, তাতালি উপজেলার ২৫ বছর বয়সী শাহজালাল মিয়াকে তার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।শাহজালাল বলেন, ‘সেখানে কোনো কাজ ছিল না, সামপ্রতিককালে তিনিও একজন কৃষিকর্মী ছিলেন। ‘আমি শুধুমাত্র তিন মাস কাজ করতে পারি। বাকি নয় মাস আমি কিছুই করছিলাম না।’তিনি এবং তার পরিবার এক খণ্ড ছোট্ট জমিতে চাল ফলাতেন। সাইক্লোন সিডর শুধু তাদের ঘর এবং ফসলই ধ্বংস করেনি, বাড়ির ভেতরে লবণ পানিতে সয়লাব করে ফেলে। এতে ধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি আজও, স্থানীয় কৃষকদের জন্য চাল বা অন্যান্য ফসল উৎপন্ন করার জন্য মাটি এখনো খুব লবণাক্ত। ভূগর্ভস্থ নলকূপ এবং নদী থেকে তোলা পানিতেও উচ্চ লবণাক্ততা রয়েছে।এমনকি আজও, স্থানীয় কৃষকদের জন্য চাল বা অন্যান্য ফসল উৎপন্ন করার জন্য মাটি এখনো খুব লবণাক্ত। ভূগর্ভস্থ নলকূপ এবং নদী থেকে পানিও উচ্চ লবণাক্ততা রয়েছে।শাহজালাল বলেন, ‘পানিতে অনেক লবণ আছে। মাঠে কিছুটা ফসল বাড়ানোও সত্যি কঠিন। ‘যদি মিষ্টি [বিশুদ্ধ] পানি থাকত, তবে আমার জন্য ফসল চাষ করা এবং অন্যান্য কৃষি কাজ করা সম্ভব হতো,’ কিন্তু, যথেষ্ট লবণাক্ততার কারণে, ‘কৃষক বছরে একবার ফসল ফলাতে পারে, অথচ একই জমিতে দুই বা তিনবার ফসল ফলাতেই তারা অভ্যস্ত।’ধনী গৃহস্থের জমিতে কাজ নিয়েও তিনি জীবিকা নির্বাহ করতে অক্ষম থাকলেন, এরপর আসলে শাহজালাল ও তার স্ত্রীর সামনে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাদের গল্প খুব সাধারণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি ও মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (আরএমএমআরইউ) এর মতে, প্রতি বছর লাখ লাখ বাংলাদেশি তাদের গ্রামীণ বাড়ি থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর কারণে শহরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।এই সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দশকে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি তাদের জীবিকা হারাবেন, এই মন্তব্য করেন ড. হক অনুমান করেন।অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতির জন্য ঘূর্ণিঝড় অনেকগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম। দেশটিতে উচ্চ মাত্রায় নদী এবং উপকূলীয় ভাঙন, বন্যা এবং এমনকি কিছু জায়গায়, খরা বা পানির অভাব তীব্র হতে দেখা যাচ্ছে।ইউনাইটেড ন্যাশনাল ইন্টারন্যাশনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) দ্বারা প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতির একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের বন্যার কারণে স্থানচ্যুতির ঝুঁকির দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম স্থানে রয়েছে।জেনেভা-ভিত্তিক আইডিএমসি-এর পরিচালক, আলেকজান্ডার বিলাল বলেন, ওই প্রতিবেদনে ‘ধীর গতির বিপর্যয়গুলোর’ কারণে যারা বিতাড়িত তাদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, কারণ এটি নিরীক্ষা করা কঠিন।’তিনি আরো বলেন, ‘যখন আমি বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে সফরে গিয়েছিলাম, তখন আসলেই উপকূলীয় ভাঙন কতটুকু প্রকট তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ভোলার [বরিশাল শহর দক্ষিণে একটি জেলা] জমি আক্ষরিক অর্থেই জলে মিশে যাচ্ছে।’বাংলাদেশে বেশিরভাগ বাস্তুচ্যুত লোকের ঠিকানা হয় ঢাকা শহরের কোনো একটি বস্তি। গত কয়েক দশকে ঢাকায় আসা মানুষের সংখ্যা এই এলাকা থেকে এত বেশি হচ্ছে যে, এর একটি বস্তির নামকরণ করা হয়েছে- ‘ভোলা’ ।যদিও সবাই রাজধানীতে চলে আসে না। শাহজালাল তাদের একজন। ঢাকা না গিয়ে তিনি তার নিকটতম বড় শহর বরিশাল গিয়েছিলেন।‘আমার গ্রাম থেকে অনেক লোক বরিশালে কাজ করতে আসে এবং আমি ঢাকা বা চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে ছেড়ে যেতে চাই না- বরিশালে আমি তাদের সঙ্গে নিয়ে আসতে পারব, এটা আমার শক্তিতে কুলায়’, তিনি বলেন।জীবন এখানেও যে সহজ তা নয়। শাহজালালের স্ত্রী নাদিরা বেগম, যিনি তখন গর্ভবতী ছিলেন, বললেন, ‘বরিশালে আমরা প্রথম যে বস্তিতে গিয়েছিলাম, সেটি নোংরা ছিল এবং কোনো পরিষ্কার পানি বা টয়লেট ছিল না।’শাহজালাল আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি কিভাবে অন্য বাচ্চারা বড় হয়ে উঠছে, এটা কতটা নোংরা ছিল এবং আমরা আমাদের বাচ্চাকে এভাবে বেড়ে উঠতে দেখতে চাইনি।’তাদের মেয়ে হালিফা, এখন পাঁচ মাস বয়সী- তারা জন্মগ্রহণ করে বরিশালের নামার চর বস্তিতে। হালিফা মনে করেন, এই বস্তি নদী লাগোয়া হওয়ার কারণে বাতাস নির্মল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এখন তাদের একটি টয়লেট এবং পানির ব্যবস্থা আছে।শাহজালাল ও নাদিরার রুম থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে সিঙ্কসহ একটি পরিষ্কার টয়লেট ব্লক রয়েছে। দাতব্য প্রতিষ্ঠান ওয়াটার স্যানিটেশন ফর আরবান পুওর (ডব্লিউএসইউপি) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই ব্লকে পানি ধরে রাখার ট্যাংক এবং পাম্প রয়েছে, যার মানে হলো, বস্তিতে যেমন টয়লেট থাকে, এটা তার থেকে আলাদা। এটা পরিষ্কার রাখা সহজ।এই মুহূর্তে আটটি পরিবার দুটি টয়লেট এবং একটা ধোয়ার বেসিন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। এটা তাদের পরিচ্ছন্ন জীবন গঠনে বড় প্রভাব ফেলে। নাদিরা বলেন, ‘আমরা যেখানে বাস করতাম তার তুলনায় এটা অনেক ভালো।’বাংলাদেশের অনেক বস্তিবাসীর তুলনায় তারা ভাগ্যবান। বেশিরভাগ বস্তি যে কেবল জনাকীর্ণ তাই নয়, পুরো পরিবারের সদস্যরা একটি কক্ষে থাকে। আর তাদের জীবনযাপনের আইনি শর্তগুলো জটিল ও অদ্ভুত থাকার কারণে পৌর বা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বা পয়প্রণালীর দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মনোযাগের বাইরেই তাদের জীবন কাটে। বস্তিবাসীরা বিশেষ করে অসুস্থতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণই থাকে- বিশেষ করে পানিবাহিত রোগে তারা বেশি ভোগে।‘খারাপ স্যানিটেশন পরিবারের এবং ব্যক্তি জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে,’ আবদুস শহীদ, ডব্লিউএসইপি বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মন্তব্য করেন।‘যদি কোনো রিকশাচালক অসুস্থ হয় এবং এক বা দুই দিনের জন্য কাজ করতে না পারেন, তবে এটি তাদের জন্য বিশাল ক্ষতি বয়ে আনে। গার্মেন্টকর্মী যদি সাত দিনের জন্য অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে তার বস তাকে সরিয়ে দেবে। তিনি তার চাকরি হারান,’ তিনি বলেছেন।ডব্লিউএসইউপির মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো বাংলাদেশের চারটি শহরে এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর পাশাপাশি আফ্রিকায় কাজ করে। এমন বেসরকারি সংস্থাগুলো স্যানিটেশন সমস্যা মেটাতে কঠোর পরিশ্রম করছে, তবে সমস্যাটির নিরসন সহজ নয়। শাহীন বলেন, ‘গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত আরো বেশি মানুষ নগরীতে আসছে, বাংলাদেশে এর মূল কারণটা হলো জলবায়ু পরিবর্তন’ ‘আমি আশঙ্কা করি যে বস্তিগুলোতে পরিস্থিতি দিনে দিনে আরো খারাপ থেকে নিকৃষ্টতর হবে।’বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি, অভ্যন্তরীণ অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় এটিই অবশ্য একমাত্র দেশ নয়। গ্লোবাল রিপোর্ট অন ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্টের মতে, ২০১৮ সালে ২৮ মিলিয়ন নতুন অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি রেকর্ড করা হয়েছে। ঝড়, বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ে ১৭ মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও সহিংসতার ফলে আরো প্রায় ১১ মিলিয়ন লোক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। আইডিসিএম পরিচালক মিজ বিলাক বলেন, ক্রমবর্ধমানভাবে, বিশ্বের অভ্যন্তরীণভাবে বিচ্ছিন্ন মানুষেরা শেষপর্যন্ত শহরগুলোতেই ভিড় জমায়। তিনি বলেন, ‘যেকোনো শহরের বিতাড়িত ব্যক্তিরা প্রধানত স্থানীয় সরকারগুলোর উপরেই বিরাট চাপ সৃষ্টি করে।’তিনি বলেন, ‘তারা যে পরিমাণে সমস্যা মোকাবিলা করতে সফল হয়, সেটা নির্ভার করে সম্পদের যোগানের ওপর।’ স্বাভাবকিভাবেই, এটি দরিদ্র দেশগুলোকে বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়, তিনি যোগ করেন।জলবায়ু-সংক্রান্ত বিপর্যয়গুলোই কিন্তু শুধুমাত্র গ্রামীণ-নগর অভিবাসনের ক্রমবর্ধমান হারে পরিবর্তন এনে শহরগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে না। বিশ্ব ক্রমাগতভাবে গ্রাম মুছে দিয়ে শহুরে হয়ে উঠছে। শহুরে নাগরিকরাও ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়ের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।জাতিসংঘের প্রতিবেদন যেটি এই বছরে মানুষের স্থানচ্যুতির বিষয়ে শহুরে ডাইমেনশনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, সেটি বলেছে, ??‘বিশ্বব্যাপী ১৭ মিলিয়ন মানুষ কেবল বন্যার কারণে স্থানচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ শহরে বা আধা শহর এলাকায় বসবাস করে। আর দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে শহুরীকরণ বিশেষ করে দ্রুতলয়ে ঘটছে, সেখানে এই হার ৯০ শতাংশ । যে শহরগুলোতে যাদের স্থানচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বস্তিবাসী, মন্তব্য করেন মিজ বিলাক। কারণ তারা যেভাবে বেঁচে থাকে, সেখানকার কাঠামো এবং সেটিংস নাজুক, সম্পদ অপ্রতুল। এসবই তাদের স্থানান্তর ও রুগ্ন থাকার জন্য যথেষ্ট। ‘অবশ্যই, তাদের (শহুরে বস্তিবাসী) মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে তাদের গ্রামীণ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, এটি হবে তাদের জীবনের একটি দ্বিতীয় স্থানচ্যুতি।আর যারা গ্রামে রয়ে গেছেন তাদের জন্য পরিস্থিতি উজ্জ্বল হওয়া থেকে অনেক দূরে। শাহজালালের গ্রামকে যুক্ত করেছে যে সড়ক, তার দুপাশে মাঠের পর মাঠ বিরান পড়ে আছে। আগে তা ছিল ধানক্ষেত। ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আমার গ্রাম ছিল কৃষকে পরিপূর্ণ। অথচ এখন আপনি তাদের কাউকে দেখবেন না। সব খালি।’গ্রামও খুব অদ্ভুতভাবে শান্ত। শাহজালালের বর্ধিত পরিবারে কেবল পুরোনো প্রজন্মই রয়ে গেছে। শাহজালালের বাবা-মা ও তার চাচা। তাদের অনুমান, ঘূর্নিঝড় সিডরের পরে ৭০ ভাগ মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। শাহজালালের চাচা বলেন, ‘সব যুবক কাজের সন্ধানে যেতে বাধ্য হন।’ ‘কখনো কখনো তারা তাদের সঙ্গে করে স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে যায়, কখনো তারা রেখে যায়।’ব্যতিক্রম হলো শাহজালালের ভাই মোহাম্মদ সাইদুল। তিন ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ হলেন ২৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ। চট্টগ্রামে গিয়ে কিছুদিন কাজ করেছিলেন, কিন্তু বাড়ি ফিরে আসেন।এখন তিনি এবং তার পরিবার চিংড়ি এবং মাছ চাষ করেন। এটি ধান চাষের চেয়ে অনেক কম লাভজনক।‘আমরা জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট সংগ্রাম করি কিন্তু আমি তা ছেড়ে শহরে যেতে চাই না- কারণ এটা আমার বাড়ি’, বলেছেন সাইদুল।[সুজানা স্যাভেজ: প্রখ্যাত বৃটিশ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, দি ইকনোমিস্ট, বিবিসি, আল জাজিরা, ওয়াশিংটন পােসে্ট তার লেখা নিয়মিত ছাপা হয়। ১৬ই মে ২০১৯ বিলাতের দি টেলিগ্রাফে মুদ্রিত প্রতিবেদনের হুবহু তর্জমা]