সিগারেটকে প্রণোদনা দিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে: দিলীপ বড়ুয়া
প্রকাশিত: ০৩ মে ২০১৯, ০০:০০
একটি দেশের বাজেটে কোনো শিল্পকে ধ্বংস করার কথা নয়। অথচ প্রতি বছর বাজেট এলে শুধু বিড়ি শিল্প নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সুপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুধু বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করা হয়। ধূমপান বন্ধের নামে বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করে সিগারেটকে প্রণোদনা দেয়া হয়। যেখানে এ দেশের শ্রমঘন বিড়ি শিল্পকে প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখার কথা কিন্তু বিদেশি কোম্পানি সিগারেটকে নানা সুবিধা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘শিল্প বাঁচাও শ্রমিক বাঁচাও’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি আরো বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবির মূল নিয়ামক ছিল বিড়ি শ্রমিকরা। এদেশের মুক্তির সংগ্রামে তারা সর্বদা সঙ্গে ছিলেন। তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সঙ্গে জড়িত। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কর্মের নিশ্চয়তা বিধান বিড়ি শ্রমিকদের দিতে হবে। বিড়ি শিল্প থেকে অনেক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে সিগারেট কারখানায় তেমন শ্রমিক নেই। বিড়িতে গ্রামীণ জনপদের লাখ লাখ মানুষ জাড়িত। তাই বিড়ি শিল্পকে সুরক্ষা করতে হবে। বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত গরিব অসহায়দের অন্ধকারে ঠেলে না দিয়ে তাদের দিকে সুনজর দিতে হবে।গবেষণা সংগঠন গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) এবং বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের আয়োজনে আলোচনসভায় সভাপতিত্ব করেন আরডিসি-এর চেয়ারপারসন প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম কে বাঙ্গালী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, কার্যকরী সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি, যুগ্ম-সম্পাদক হারিক হোসেন, সহসাধারণ সম্পাদক লাভলু, শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য মিস মায়া বেগম, বিড়ি শ্রমিক নেতা ফজলুর রহমান, হাকিমুল বেগম। সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) সাধারণ সম্পাদক মিস জান্নাত-এ-ফেরদৌসী লাকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আরডিসির পরিচালক আসাদুল্লাহ সরকার। সভাপ্রধান প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘ধূমপান বন্ধের নামে সিগারেটকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় দিয়েছে সরকার। সিগারেট কোম্পানি কি দুলা ভাই হয়? বিড়ি ও সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অথচ একটি বন্ধ করে দিয়ে অন্যটিকে লালন করছে। বিড়ি ও সিগারেট একই শিল্প। বন্ধ করতে হলে দুটিকে একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে। বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের ভাগ্য নীতিনির্ধারণ না করে কোনোভাবে তাদের কর্ম বন্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হক বলেন, সরকারের নীতি হচ্ছে ধূমপান ৫ শতাংশে কমিয়ে আনা। কিন্তু মুখে ধূমপান বন্ধের কথা বলে অন্তরে ধূমপান পুষে রাখা চলবে না। বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর প্রতি সহানুভূতিশীল সহ্য করা হবে না। তিনি আরো বলেন, ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ না হলে বিড়ি শিল্প বন্ধ নয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকবান্ধব। আশাকরি তিনি বিড়ি শিল্প ও শ্রমিকদের প্রতি সুনজর দেবেন। অনুষ্ঠানে শ্রমিক নেতারা বলেন, ‘বিড়ি কারখান বন্ধ হলে আমাদের রাস্তায় থালা নিয়ে ভিক্ষা করতে হবে। শ্রমিকরা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়বে। আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর বাজেটে বিড়ির ওপর যেন কোনো করারোপ না করা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ করেন। বিড়ির ওপর করারোপ করা হলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি করেন শ্রমিক নেতারা। এছাড়া মালিকদের প্রতি শ্রমের ন্যায্যমূল্য দেয়ার দাবি করেন তারা। বিজ্ঞপ্তি