যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার রাশিয়া সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪১
দৈনিকসিলেটডেস্ক:ওয়াশিংটন সফরের তিন সপ্তাহের মাথায় মস্কো যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বিশেষ আমন্ত্রণে আজ ৩ দিনের সফরে যাচ্ছেন তিনি। ওই সফরে রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে তার আলোচনা হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আগামী ৩০শে এপ্রিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের সঙ্গে একান্ত এবং আনুষ্ঠানিক বৈঠক। গত ৮ই এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও'র আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করেন ড. মোমেন। সেই সফরে দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় তার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাবও আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়া- এক মাসের মধ্যে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকা দু'টি দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর, কূটনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। সেগুনবাগিচা অবশ্য বলছে এটি পরিচিতিমূলক বা শুভেচ্ছা সফর, তবে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া বাংলাদেশের দুর্দিনের বন্ধু। দেশটির সঙ্গে অনেক ইস্যু রয়েছে। জানুয়ারিতে নতুন সরকার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে ড. মোমেনের দায়িত্ব গ্রহণের এটা তার প্রথম মস্কো সফর হবে। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ভারত ও চলতি মাসের সূচনাতে যুক্তরাষ্ট্র সফর যেমন হয়েছে এবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫ প্রভাবশালী সদস্য রাষ্ট্রের অন্যতম রাশিয়ায় সফরটি হচ্ছে। সেই বিবেচনায় অবশ্যই এটি তাৎপর্যপূর্ণ। সেগুনবাগিচার ভাষ্য মতে, যুদ্ধবন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যে মাত্রায় উন্নীত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তবে এখন সেটাকে 'কৌশলগত পর্যায়ে' উন্নীত করার চেষ্টা রয়েছে উভয়ের তরফে। দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশ-রাশিয়া সহযোগিতা বেশ পোক্ত। তবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংকট রোহিঙ্গা ইস্যুতে 'বন্ধু' রাশিয়ার সমর্থন পাচ্ছে না বাংলাদেশ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের কোন প্রস্তাব গ্রহণ করা যাচ্ছে না রাশিয়া এবং চীনের অসম্মতির কারণে। এই যখন অবস্থা, তখন মন্ত্রীর মস্কো সফর। সেই বিবেচনায়ও সফরটি তাৎপর্যপূর্ণ- বলছেন পেশাদার কূটনীতিকরা। তাদের দেয়া তথ্য মতে, উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা ও বাণিজ্য অগ্রাধিকার সুবিধা নিয়ে মন্ত্রী মোমেন আসন্ন সফরে আলোচনা করবেন। মস্কো সফর এবং দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোমেন গতকাল মানবজমিনকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি কাল (আজ) যাচ্ছি। আমি খুবই আনন্দিত যে সফরে আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে আলোচনা হবে। মস্কোর বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে রাশিয়ার সমর্থন-সহযোগিতা চাইবেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাশিয়া আমাদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ওই প্রকল্পটি সময়মত শেষ হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করবো। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ওই চুক্তির আওতায় সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানে দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হবে। রাশিয়ার কোম্পানী গ্যাজপ্রম ভোলায় গ্যাস উত্তোলনে সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখান থেকে সাড়ে ৭ পারসেন্ট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমায় ৩৪-৫০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রয়েছে। আমরা চাই সাগরে গ্যাস উত্তোলনে রাশিয়া আমাদের সহায়তা করুক। মন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ ঠিক পথেই এগুচ্ছে। প্রথম ধাপের ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কাজ ২০২৩ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রাক্কলন বলছে, টার্গেটের চেয়ে চার মাসের মতো পিছিয়ে আছে কাজ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন টার্গেটের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার তাগিদ দেবেন। কারণ, সময়মত কাজ শেষ না হলে খরচ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোহিঙ্গা অগ্রাধিকার: মিয়ানমারের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক বেশ গভীর। নিরাপত্তা পরিষদে দেশটির পক্ষেই রাশিয়ার অবস্থান। বাংলাদেশও তা জানে। মন্ত্রী হয়ত চাইবেন অন্য ইস্যুতে নয়, কেবল রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্তত রাশিয়া যাতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে থাকে এবং সমস্যাটির সমাধানে ভূমিকা রাখে। এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়ার কাছে আমাদের একটাই চাওয়া- তা হল রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনকে নিরাপদ করা। বাংলাদেশ যারা অস্থায়ী আশ্রয়ে রয়েছে তারা যেন রাখাইনে নিরাপদে ফিরতে পারে এবং বসবাস করতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিটি দেশের নিজস্বতা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, রাখাইনে একটি নিরাপদ জোন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও রাশিয়ার সহায়তা করতে পারে। মন্ত্রী হয়ত সেই আলোচনাই করবেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো: কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্থান, কিরগিজস্তান ও আর্মেনিয়া মিলে ইউরেশিয়া ইউনিয়ন জোট গঠন করেছে এবং ওই দেশগুলোতে বাংলাদেশ বাণিজ্য সুবিধা চায়। ওই জোটের কোনও একটি দেশে বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার জন্য ইউরেশিয়া ইউনিয়ন সচিবালয়ের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হবে। এই দর কষাকষি শুরু করার জন্য বাংলাদেশ একটি চুক্তি চূড়ান্ত করেছি এবং আশা করছি, এটি খুব শিগগিরই স্বাক্ষর হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মস্কো সফরে দেশটি এবং ওই জোটের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হবে। একই সঙ্গে রাশিয়া আরও বেশী বিনিয়োগ চাইবে বাংলাদেশ।