যুগান্তর : আসন্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অসদুপায় প্রতিরোধে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ম্যাগনেট অপ্টিক ও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর ব্যবহার করা হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোয় কেন্দ্রপ্রধান এবং নিয়োজিত ব্যক্তি এসব ডিভাইস ব্যবহার করবেন। তারা ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি দিয়ে অসদুপায় অবলম্বনকারীদের শনাক্ত করা যাবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও গুজব রোধে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি বাড়িয়েছে। এরই মধ্যে ১০ সদস্যের টিম প্রশ্নফাঁসকারী ফেসবুক গ্র“প ও পেজকে অনুসরণ করছে।সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্নফাঁসকারী ও গুজব রটনাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সাইবার ইউনিট ও গেয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে ১০টি স্পিয়ার হিট টিমও গঠন করা হয়েছে। ২ ফেব্র“য়ারি শুরু হচ্ছে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা। এই পরীক্ষা সামনে রেখেই এসব পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পুলিশ।এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদের পরিকল্পনা যদি এখনই প্রকাশ করে দিই, তাহলে যারা দুই নম্বরি করার পরিকল্পনা করছে, তারা আরেকটা প্ল্যান বের করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণে অনেক পরিকল্পনা করেছি। এটা কনফিডেনসিয়াল বিষয়, স্টেট সিকিউরিটি। পরীক্ষার আগে এ বিষয় বলা ঠিক হবে না।’ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের এডিসি নাজমুল ইসলাম জানান, ৩-৪ বছর পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে সবাই সতর্ক। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা এবং গুজবও রয়েছে। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় ফেলছে। তিনি বলেন, নতুন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেক সেনসেটাইজড। তারা পরীক্ষায় অসদুপায়, প্রশ্নফাঁস বা অন্য যে কোনো জালিয়াতি রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এরই মধ্যে ১০ জনের টিমকে অনলাইনে বসিয়ে দিয়েছি। কতগুলো আইডি পাওয়া গেছে। যেগুলো প্রশ্নপত্র গ্র“প বা পেজ নামে চলছে। এসব পেজ থেকে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়, বিভ্রান্ত্রি ছড়ানো হয়। এগুলোকে আমরা খুঁজে খুঁজে বের করছি এবং ‘ডাউন’ করার চেষ্টা করছি।’ পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে সাইবার ক্রাইম ইউনিট এবং ডিবি পুলিশের সমন্বয়ে দশটি ‘স্পিয়ার হিট’ টিম তৈরি করা হয়েছে। যারা ১০টি টিমে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে।’তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা জনপ্রিয় চ্যাট ইঞ্জিনগুলোর পাবলিক বা ক্লোজড গ্রুপে যারা প্রশ্ন সরবরাহ করবে বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, সেগুলো ভুয়া! এরই মধ্যে সেই ভুয়া এন্টিটি বা কনটেন্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।পুলিশ জানায়, এ বছর পাবলিক পরীক্ষার হলগুলোয় ফ্রিকোয়েন্সি এবং ম্যাগনেটিক ডিটেক্টর থাকবে, যা দিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর নকলবাজি শনাক্ত করা যাবে। এতে যার কাছে নকল থাকবে, সে ধরা পড়বে।জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমি মনে করি, তারা তা করতে সক্ষম। এরপরও যদি কোনো প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, তাহলে তা করা হবে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তি মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে যদি কেউ অপরাধ করে, তাহলে তাকে যে কোনোভাবে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।তিনি সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণের উদহারণ দিয়ে বলেন, বর্তমানে আমাদের কাছে এমন কিছু যন্ত্রাংশ রয়েছে, যা দিয়ে দেশের ভেতরে কোথাও কোনো ডিজিটাল অপরাধ করলে তা ডিটেক্ট করা সম্ভব। সুতারং পরীক্ষায় প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধ করলে ম্যাগনেট অপ্টিক ও ফ্রিকোয়েন্সি ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।’