তখন রাত সাড়ে তিনটা, ভাই সিসিইউতে! পর পর তিন দিন দুইরাত শরীর কোনো বিছানার সংযোগ পায়নি। কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে আগের দু’রাত কেটেছে, দিন-রাত এক করে হাসপাতালের এ-দরজা ও-দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই কেটে গেছে, প্রায় ষাট ঘণ্টা ধরে নিকেপ পরা হাঁটু ফেঁসে গিয়ে বিদ্রোহ করছে। ওপর-নিচ দু’দিকে পা ফুলে গেছে। হাসপাতালের ভিজিটর ওয়েটিং রুম। ক্ষয় হয়ে যাওয়া হাঁটুতে বসে থাকার এতোটুকু শক্তিও অবশিষ্ট নেই। নিরূপায় হয়ে নিকেপ দু’টো খুলে নিয়ে গায়ের চাদরটা মেঝেতে বিছিয়ে বড় হাতব্যাগটাকে মাথার নিছে দিয়ে শুয়ে পড়তে বাধ্য হলাম। আহ! মাটিতে শুয়েও যে এতো শান্তি তা এর আগে কোনোদিন অনুভব হয়নি। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে, মনে হলো ইন্দ্রযানে চড়ে স্বর্গে পৌঁছে যাচ্ছি, বেশ কড়া স্বরে সমস্ত অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠলো। মাথার সামনে দাঁড়িয়ে যমদূতসম ডিউটি গার্ড তাড়া দিচ্ছে, ম্যাডাম উঠুন মেঝেতে শোয়া যাবে না। একদম সত্যি যে হাসপাতালের মেঝে শুয়ে থাকার জায়গা নয়। কিন্তু আগের দু’রাত একই জায়গায় পত্রিকার কাগজ বিছিয়ে কয়েকজন অভিভাবক সারারাত দিব্যি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন সকাল সাতটা পর্যন্ত। কেউ কিছু বলেনি। পুরুষ মানুষ শুয়ে থাকলে বা অঘোরে ঘুমিয়ে নাক ডাকার শব্দে আশপাশের সবার ঘুম তাড়াতে সহায়তা করার জন্য সকলেই বেশ আমোদ উপভোগ করছিলেন লক্ষ করছিলাম। মেয়ে মানুষ দম চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অপরিচিত বা পরিচিত কারো সামনেই শুয়ে থাকবে সেটা মেনে নেয়া মোটেই চক্ষুসহ্যজাত নিরীক্ষণের বিষয় নয়, তাই এই ঘোর আপত্তি। অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে গিজগিজ পরিবেশে স্বর্গে গিয়েও মেয়ে মানুষকে তার সম্ভ্রম বাঁচাতে সদা তৎপর থাকতে হবে না তো?