রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের তৃতীয় তলায় পাঠাও চালক মিলন হত্যাকাণ্ডের ঘাতক মো. নুর উদ্দিন সুমনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার পূর্ব বিভাগের একটি টিম। রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে শাহজাহানপুর থানা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। ঘাতক নুর উদ্দিন সুমন একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। মতিঝিল এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় সে কিছুদিন জেলহাজতে ছিল। তার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ এলাকায়। তবে ঢাকার গুলবাগ এলাকার একটি বাসায় থাকত। গতকাল ঢাকার আদালতে হত্যাকাণ্ডের দ্বায় স্বীকার করে সে জবানবন্দি দিয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে গতকাল ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি ঘাতক নুর উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, ভুক্তভোগী মিলন ঘটনার রাতে ১০০ টাকার একটি ট্রিপ নিয়ে মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় এসেছিলেন। সেখানে যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে আবুল হোটেলের সামনে আসেন। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় ঘাতক নুর উদ্দিন সুমনের। সুমন তখন ৫০ টাকা চুক্তিতে গুলিস্তান নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সদরঘাটে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে হবে ভেবে মিলন ৫০ টাকায় গুলিস্তান যেতে রাজি হয়ে যান। আবুল হোটেলের সামনে দিয়ে ফ্লাইওভারে উঠে মালিবাগ পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছাকাছি আসার পর নুর উদ্দিন একটি দিয়াশলাই ফেলে দিয়ে মিলনকে বলে মোটরসাইকেল থামান সিগারেট ধরাবো দিয়াশলাইটা নিচে পড়ে গেছে। মিলন তখন মোটরসাইকেল থামান। আর নুর উদ্দিন পড়ে যাওয়া দিয়াশলাই মাটি থেকে তুলে নিজে মোটরসাইকেল চালানোর প্রস্তাব দেয় মিলনকে। কিন্তু মিলন তাতে রাজি হননি। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটিকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে নুর উদ্দিন তার কাছে থাকা এন্টি কাটার দিয়ে মিলনের গলায় টান দেয়। বাঁচাও বাঁচাও বলে মিলন চিৎকার করছিলেন। আর এই সুযোগেই নুর উদ্দিন মোটরসাইকেল আর মিলনের মোবাইল ফোন নিয়ে রাজারবাগের দিকে চলে যায়। বাতেন বলেন, অ্যাপস ব্যবহার না করে রাইড শেয়ার ও গভীর রাতে নির্জন ফ্লাইওভারে দিয়ে আসাতে মিলনকে খুব সহজেই হত্যা করে পালিয়ে যায় নুর উদ্দিন। যদি তিনি অ্যাপস ব্যবহার করতেন তবে কিছু তথ্য থেকে যেত। তা দিয়ে আসামী শনাক্ত করা যেত। ক্লু লেস থাকার পরেও ডিবি ঘাতককে ধরতে পেরেছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটা ফ্লাইওভারের মোড়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সিটি করপোরেশন পুরো ফ্লাইওভারকে অন্ধকারের মধ্যে রেখেছে। যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয় নুর উদ্দিনকে: ডিবি সূত্র বলছে, মামলাটি সম্পূর্ণ ক্লুলেস ছিল। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় সে মিলনের মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়। ওই ফোনটি সে মোশারফ হোসেন নামের একজন নাইট গার্ডের কাছে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। মোশারফ নতুন সিম লাগিয়ে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছিলো। আর মিলনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ডিবি তার ফোনের আইএমই নম্বর পাওয়া যায়। এভাবে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে মোশারফকে শনাক্ত করা হয়। পরে মোশারফই নুর উদ্দিনের সন্ধান দেয়। এরপর গুলবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নুর উদ্দিন ছিনতাই করা মোটরসাইকেলটি একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচে রেখেছিলো। মোটরসাইকেলটি বিক্রি করার চেষ্টা করছিলো। কয়েকজন দাম দরও করেছে। একজন ক্রেতা ৪০ হাজার টাকা দাম করেছে। ডিবির অভিযানিক টিমের এক সদস্য বলেছেন, তার নিজের কোনো মোটরসাইকেল নাই অথচ তার বাসা থেকে ৯টি হেলমেট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত গত ২৬শে আগস্ট মালিবাগ ফ্লাইওভারের তৃতীয় তলায় গলাকেটে হত্যা করা হয় পাঠাও চালক মিলন মিয়াকে। এসময় ঘাতক তার কাছে থাকা মোটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায়। এসময় মিলনের গলা দিয়ে অঝোর ধারায় রক্ত ঝরছিলো। তখন ভুক্তভোগী মিলন তার গলার ক্ষতস্থান হাত দিয়ে চেপে ধরে শান্তিনগর ফ্লাইওভারের ঢাল দিয়ে নামছিলেন। পরে দুজন পথচারি তাকে উদ্ধার করে পল্টন থানার টহল পুলিশের কাছে নিয়ে যান। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।