এই নিয়ে টানা দুটি ট্রফির লড়াইয়ে সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই খেলতে নামে বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে আঙুলের চোটের কারণে সাকিবকে পায়নি আকাশী-হলুদ শিবির। এবার তিনি নেই পিঠের অস্বস্তিতে। প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় পিঠের বাঁ পাশের পেশির চোটে অর্ধশতক পূরণের পর মাঠ ছাড়েন সাকিব। পরে ব্যথা কমলেও অস্বস্তি থেকেই গেছে। ফাইনালে খেলা, না খেলার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ফাইনালে সাকিবের জন্য শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা ছিল দলের। পিঠের অবস্থা পরখ করার জন্য ফিজিও-ট্রেনারের সঙ্গে সকালে আগেভাগেই মাঠে চলে এসেছিলেন সাকিব। কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারেননি নিজের অবস্থায়। দলের সেরা ক্রিকেটারকে ছাড়া মাঠে নামার জন্য অবশ্য মানসিকভাবে তৈরি ছিল দল। ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, সাকিব না খেললেও বিশ্বাসে কমতি নেই তাদের। ‘সাকিবের থাকা না থাকাই ম্যাচের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর, অধিনায়ক হিসেবে সেটা আমি মনে করি না। সাকিব কত গুরুত্বপূর্ণ বা কত বড় ক্রিকেটার, সেটা আমার মুখ থেকে শুনতে হবে না। সাকিব বাংলাদেশের জন্য কী করে বা কত বড় ক্রিকেটার, সবাই জানে। সাকিব যদি না খেলতে পারে, ওকে মিস করা আমাদের জন্য ভালো খবর অবশ্যই নয়। তবে পাশাপাশি এটাও বলব, সাকিবকে ছাড়াও এই ম্যাচ জয়ের সামর্থ্য আমাদের আছে। এজন্যই সেরা ১৫ জনকে আনা হয়। আমি অধিনায়ক হিসেবে বলব, সাকিব না খেললে, ওর জায়গায় যে খেলবে, সেও পেশাদার ও তারও সামর্থ্য আছে ভালো করার।’ সাকিব যে ফ্যাক্টর তার প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশের বোলিংয়ে। গতকাল ডাবলিনে ফাইনালে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠান মাশরাফি। আর সাকিবের অনুপস্থিতি ভালোভাবেই টের পেয়েছেন মাশরাফি। ইনিংসের শুরুর ২০ ওভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক ছয়জন বোলারকে ব্যবহার করেও উইকেটের দেখা পাননি। ২০.১তম ওভার শেষে বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। ১৩১/০ সংগ্রহ নিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অপরাজিত দুই ওপেনার শেই হোপ ও সুনীল অ্যামব্রিস। এদিন বল হাতে সবচেয়ে মলিন নৈপুণ্যটা ছিল শীর্ষ পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের। আগের ম্যাচে ১০ ওভারের স্পেলে ৪৩ রানে চার উইকেট নেন তিনি। আর গতকাল উইকেটশূন্য মোস্তাফিজ দেন ৩ ওভারে ৩৬ রান। সাকিব তিন ফরমেটেই দেশসেরা অলরাউন্ডার। ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং- সাকিবের কাছে আসলে দলের চাওয়া থাকে তিন ডিপার্টমেন্টেই। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ পর্যন্ত দেশের হয়ে ১৯৮টি ওয়ানডে খেলেছেন সাকিব। ব্যাট হাতে ৩৫.৭৩ গড়ে করেছেন ৫৭১৭ রান। সেঞ্চুরি ৭টি, হাফসেঞ্চুরি ৪২টি। বল হাতেও তার দুর্দান্ত রেকর্ড। ওয়ানডেতে উইকেট নিয়েছেন ২৪৯টি। ইকোনমি রেট মাত্র ৪.৪৪। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন একবার, ৮ বার নিয়েছেন ৪ উইকেট।আয়ারল্যান্ডে খেলতে গিয়েও দুর্দান্ত সাকিব। গ্রুপ পর্বে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করে ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত খেলেছেন তিনটি ম্যাচ। যার প্রথমটিতে (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) করেছেন অপরাজিত ৬১ রান। ৩৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। পরের ম্যাচে করেন ২৯ রান এবং ২৭ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো উইকেট না পেলেও ব্যাট হাতে ৫০ রান করার পর ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। যে কারণে ফাইনালে খেলতে পারেননি তিনি। আর ব্যাটে-বলে অনন্য এক ‘ডাবল’ কীর্তির হাতছানি রয়েছে সাকিবের সামনে। ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে তার ৫০০০ রান পূর্ণ হয়েছে আগেই। আর ১ উইকেট পেলে পূর্ণ হবে ২৫০ শিকার। ওয়ানডে ইতিহাসে ব্যাটে-বলে ৫০০০ রান ও ২৫০ উইকেটের কীর্তি রয়েছে মাত্রই চার জন ক্রিকেটারের। শ্রীলঙ্কার সনাত জয়াসুরিয়া, পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি ও আবদুর রাজ্জাক এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিসের। সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে আবদুর রাজ্জাক এ ডাবল পূর্ণ করেন ২৩৪ ম্যাচে। তবে রেকর্ড ভাঙাটা সাকিবের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ পর্যন্ত সাকিব আল হাসান খেলেছেন ১৯৮ ম্যাচ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫০০০ রান ও ২৫০ উইকেটের ‘ডাবল’ পূর্ণ করতে যথাক্রমে ৩০৪, ২৭৩ ও ২৯৬ ম্যাচ লেগেছিল জয়াসুরিয়া, আফ্রিদি ও ক্যালিসের।