পতনের বৃত্তেই পুঁজিবাজার

বিডি নিউজ ২৪ প্রণব মজুমদার প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৫৪

একেবারেই ভগ্নদশা দেশের পুঁজিবাজারের। অতীতে বিভিন্ন সময়ে এ বাজারে দুষ্টচক্রের কারসাজিতে যেসব ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তা কিছুতেই নিরাময় হচ্ছে না! মন্দাভাব এখনও বিদ্যমান। বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে কদিন আগে প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় পুঁজিবাজারের অবস্থান খুবই নাজুক। পরিসংখ্যান বলছে, বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে ৫ ধাপ নেমে দেশের পুঁজিবাজার অবস্থান করছে ৪২তম স্থানে। র‌্যাংকিংয়ে বাজার মূলধনের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ। ৬ষ্ঠ স্থানে থাকা ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ৫ দশমিক ৬২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বর্তমান বাজার মূলধন সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার ঘরে। দেশের পুঁজিবাজার এখন বাজার মূলধন ও জিডিপির অনুপাত ৮ শতাংশের নিচে। পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানে প্রায় ১০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৫, ভিয়েতনামে ৪১, ইন্দোনেশিয়ায় ৪৪, থাইল্যান্ডে ৯১ ও ভারতে ১২০ শতাংশ। বৈশ্বিক সূচকে পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের পুঁজিবাজার।


সমৃদ্ধ অর্থনীতির দুটি শক্তিশালী স্তম্ভ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং পুঁজিবাজার। দেশের অর্থনীতিতে প্রথমটিতে কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা গেলেও দ্বিতীয়টিতে আমরা বেশ নিস্প্রভ। পুঁজিবাজারের অবনতি বা মন্দাভাব আমাদের দীর্ঘকালের। বহুদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ও বিচারহীনতা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে ভীষণভাবে সংকুচিত ও পঙ্গু করে রেখেছে। তিন দশক ধরে দেখছি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের শাস্তি না দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সহযোগী হয়েছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক নিজেই দুষ্কৃতকারী বনে গেছে। সুশাসনের পরিবর্তে দিনের পর দিন পুঁজিবাজারকে প্রভাবশালীদের মূলধন লুণ্ঠনের বাজারে পরিণত করা হয়েছে।


দেশের পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট আজ থেকে নয়। বাজারে আস্থা সৃষ্টিতে বিগত কোনো সরকারই আন্তরিক ছিল না। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম চৌধুরী কমিটির প্রকাশ করা ওই তদন্ত প্রতিবেদনের বিচার আজও হয়নি। অভিযুক্তরা পুনর্বাসিত হয়েছেন। বিচারের বদলে ‘ক্ষমা’ পেয়ে পুঁজিবাজারের এই লুটপাটকারীরা বরং পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করেছিলেন। কলঙ্কজনক ওই ঘটনার অভিযুক্ত একজন ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের (ডিএসই) সভাপতি যিনি এখন পৃথিবীতে নেই। রাজধানীর সদরঘাটে সাম্প্রতিককালে নৌকায় ধৃত দেশের পুঁজিবাজারের হোতা ও বড় লুণ্ঠনকারী এখন কারাগারে। শেয়ার কেলেঙ্কারির ওই ঘটনার অভিযুক্ত ছিলেন ৪৫ জন। পুঁজি লুণ্ঠনকারীরা দেশের শেয়ার বাজারকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে গেছেন।



২০১০ সালের দেশের পুঁজিবাজারে পুনরায় কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়। কেলেঙ্কারির সঙ্গে উল্লেখিতরাও জড়িত ছিল। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা নিয়ে তখন সরকারের ‘মেলোড্রামা’ মঞ্চস্থ হয়! কমিটির প্রধান সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে অপ্রত্যাশিত এবং বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়!


দেশের ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাতকে টেনে তোলার জন্য সংস্কারমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বতী সরকার। কিন্তু পুঁজিবাজারের ক্ষত নিরাময় করতে কার্যকর বড় চিকিৎসা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।


পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের নতুন কমিশন গঠিত হয়েছে এরই মধ্যে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বোর্ড পুনর্গঠন হয়েছে। পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য টাস্কফোর্স হয়েছে। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তের জন্য একটি ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলেও বাজারের বর্তমান দুর্দশা থেকে খুব দ্রুত বের হয়ে আসা সম্ভব নয়।


পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণে যারা কাজ করছে তাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা তৈরিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও বাজার নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে।


অতীতে নীতিগত রূপরেখার একটি বড় সমস্যা লক্ষ্যণীয়। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাজারের দৈনন্দিন কার্যক্রম বা বাজার উন্নয়নে অযাচিতভাবে জড়িত হয়ে পড়ছে। ফলে নিয়ন্ত্রক বিতর্কিত হচ্ছে এবং সংস্কার উদ্যোগগুলো অকার্যকর থেকে যাচ্ছে। তাই বাজার ব্যবস্থায় বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর ভূমিকা কী হবে তা নির্ধারণের সময় এসেছে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সফল অভিজ্ঞতা অনুসরণ করা যেতে পারে। স্বল্পমেয়াদে বাজারের আস্থা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সেজন্য কিছু নীতি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের একাংশের অযৌক্তিক দাবি দাওয়া এবং সেসবের প্রতি বাজারের মৌলভিত্তির বাইরে এসে অ্যাডহক ভিত্তিতে কার্যক্রমে যাওয়া থেকে নিয়ন্ত্রককে বিরত থাকতে হবে। তা না হলে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাদের আর ফেরানো যাবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us