সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের যে রাজনৈতিক প্রভাব

প্রথম আলো খান মো. রবিউল আলম প্রকাশিত: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২১

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব বাড়ছে। কেবল দেশের ভেতর নয়, বাইরে থেকেও ইনফ্লুয়েন্সাররা জনমতকে প্রভাবিত করছেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের সমান্তরালে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন—অনেকেই এমনটা ধারণা করছেন।


তবে এসব ইনফ্লুয়েন্সারদের ফলোয়াররা অনেক ক্ষেত্রেই প্রজাসদৃশ। তাই তারা অনেকটা হয়ে পড়েছেন সামাজিক যোগাযোগকেন্দ্রিক নতুন ‘সামন্তপ্রভু’। জনমত তৈরিতে এঁদের (ইনফ্লুয়েন্সারদের) ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং তাঁরা জনপ্রিয়ও বটে। কিন্তু এ প্রভাব ও জনপ্রিয়তাই শেষকথা নয়।


ইনফ্লুয়েন্সাররা যোগাযোগ সম্পর্কের ওপর নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। প্রযুক্তির এ যুগে মানুষ বড় একটা সময় ভার্চ্যুয়াল জগতে কাটাচ্ছে। ভার্চ্যুয়াল জগতে বসতি বেড়েছে, বেড়েছে সংযোগ; ভাবের আদান–প্রদানও। দর্শক-শ্রোতার ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব খতিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে।


দর্শক-শ্রোতার ওপর সংবাদমাধ্যমের প্রভাবসংক্রান্ত ২২টি তত্ত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের হ্যারল্ড ল্যাসওয়েল ‘ম্যাজিক বুলেট থিওরি’ বা ‘জাদুর টোটা তত্ত্ব’ অন্যতম। এ তত্ত্বে ল্যাসওয়েল উল্লেখ করেন, যিনি বার্তা ছুড়ে দেন, তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে শ্রোতাদের মনোভঙ্গি পরিবর্তন করতে চান এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা পারেন। এ তত্ত্ব অনুসারে দর্শক-শ্রোতাদের ওপর গণমাধ্যমের প্রভাব বুলেটের মতো তীব্র ও তীক্ষ্ণ।


এ তত্ত্বের পটভূমি তৈরি হয়েছিল আমেরিকায় রেডিওতে প্রচারিত নাটক ইনভেশন ফ্রম মার্স থেকে। এ নাটকের একটা অংশে নিউজ বুলেটিন ছিল। এ বুলেটিনে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গল গ্রহ থেকে একটি গ্যাস চেম্বার পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে। এ সংলাপ শুনে মানুষ প্রাথমিকভাবে তা বিশ্বাস করে; বাঁচতে ছোটাছুটি শুরু করে। শ্রোতারা হুড়মুড় করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে হৈহুল্লোড় সৃষ্টি হয়।


মিডিয়া লিটারেসি বা সংবাদমাধ্যমসংক্রান্ত জ্ঞান কম থাকায় তারা বিশ্বাস করেছিল, সত্যি বুঝি মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীকে আক্রমণ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর শ্রোতারা বুঝতে পারেন এটা নাটক, সত্যি ঘটনা নয়। তখন তাঁরা স্থির হন, ঘরে ফেরেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব ‘জাদুর টোটা তত্ত্বের’ মতো হয়ে উঠছে। তাঁরা যা বলছেন, অনেক দর্শক তা বিশ্বাস করছেন। কারণ, মানুষ মিডিয়াবাহিত তথ্যে প্রাথমিকভাবে সত্য বলে ধরে নেয়। যাচাই-বাছাই করেন না। অনেকের যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগও নেই।



জনগণের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি বা গণমাধ্যম সাক্ষরতার অভাব এর অন্যতম কারণ। ভুয়া তথ্য, অপতথ্য ও গুজবের প্রবাহ যে মাত্রায় বেড়েছে, সেখানে সত্য চেনা সহজ কাজ নয়। কারণ, সত্য দিয়ে হয়তো কাজ হচ্ছে না বলেই বেশি মিথ্যা বলছে। মিথ্যার বাণিজ্যিক মূল্য কয়েক গুণ বেড়েছে। বলা হচ্ছে কেবল সত্যের নয়, মিথ্যারও রয়েছে অজস্র ক্রেতা।


বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দর্শক-শ্রোতা যা দেখে তাই বিশ্বাস করে, সংবদ্ধ হয় এবং আওয়াজ তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘিরে তৈরি হচ্ছে একধরনের বিশেষ মব (বাছবিচারহীন জনতার জমায়েত)। ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব এত বেশি যে মানুষকে তারা ‘দৌড়ের ওপর’ রেখেছেন। এক তথ্য ধারণ করার আগেই আরেক তথ্য এসে হাজির হচ্ছে; বানের পানির মতো তথ্য। এক অস্থির ও বিচিত্র দাবিনির্ভর সমাজ গড়ে তুলেছেন ইনফ্লুয়েন্সাররা।


বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে, ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রতিদিন নানা বিষয়ে মন্তব্য ও বিশ্লেষণ হাজির করছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উপদেষ্টা পরিষদ, প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত এবং সংবাদমাধ্যমসহ সমকালীন নানা ইস্যুতে ইনফ্লুয়েন্সাররা অনেক বেশি তৎপর। মিডিয়া লিটারেসি (গণমাধ্যম সাক্ষরতা) বা বিশ্লেষণাত্মক মনোভঙ্গি না থাকলে তারা যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন, সেগুলোকে ক্রিটিক্যালি (যাচাই–বাছাইপূর্বক) গ্রহণ করা বা বিবেচনায় নেওয়া সহজ ব্যাপার নয়।


যেসব দর্শক, তাঁদের ভিডিও দেখেন, তাঁদের মন্তব্য পড়লে ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে তাঁদের মানসিক সখ্য বা নৈকট্যের গতিধর্ম আঁচ করা যায়। দর্শকদের অভিব্যক্তি হয় মূলত তীব্র আবেগনির্ভর। কারণ, ইনফ্লুয়েন্সাররা দর্শকের আবেগের অংশ নিয়ে কাজ করেন, যুক্তির অংশ নিয়ে নয়।


ভিডিওগুলোতে নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত বাণ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, রাগ-ক্ষোভ, বিরক্তি, তথ্য ও মানহীন তথ্যের মিশেল, যা মানুষ সহজে গ্রহণ করছে। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে এ সমাজে বেশির ভাগ মানুষ ‘পরাজিত মানসিকতা’ নিয়ে বাস করেন। এ কারণে একজন যখন অন্যজনকে গালি দিচ্ছে বা সহিংস আচরণ করছে, তখন অনেক দর্শক-শ্রোতা তাতে বিনোদন খুঁজে পাচ্ছেন। সংঘাত, ক্লেদ, ঘৃণা, স্ল্যাং, অন্যকে হেয় করার বাণিজ্যিক মূল্য এখন বেড়ে গেছে।


ইউভাল নোয়া হারারি তাঁর নেক্সাস বইয়ে উল্লেখ করেছেন, খণ্ডিত তথ্য, ভুল বিশ্লেষণ এবং অপতথ্য চিকিৎসকদের রোগের কারণ চিহ্নিত করতে বাধা সৃষ্টি করে। ঠিক তেমনি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের রগরগে উপস্থাপনায় বিষয়ের বাস্তবতা বোঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us