ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ১ ডিসেম্বর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের সংবর্ধনা এবং সেনাবাহিনীর শান্তিকালীন পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বক্তৃতা করেছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর সেনাসদর এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের শুরুতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি খুব সংক্ষিপ্ত আকারে যা বলেছেন তা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ‘ভবিষ্যতে আমাদের একটু ডিফিকাল্ট সময় পার করতে হবে’ তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা মোটেও শঙ্কা ছড়ানোর জন্য নয়, বরং সতর্কতা অবলম্বনের ইঙ্গিতবহ। দেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, তার নায়ক নিঃসন্দেহে ছাত্র-জনতা। তবে এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী করতে সেনাবাহিনীর নীরব ভূমিকার কথা অস্বীকার করা যাবে না। তাই ভবিষ্যতের ‘ডিফিকাল্ট সময়’ এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেনাপ্রধানের কথা বলার প্রাসঙ্গিকতাও অনস্বীকার্য।
এটা স্বীকার করতেই হবে যে বাংলাদেশ বর্তমানে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
রাজনৈতিক অস্থিরতা: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা এবং সংঘাত প্রবণতা। এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ: সাইবার নিরাপত্তা, জঙ্গি কার্যক্রমের আশঙ্কা এবং সীমান্তের পরিস্থিতি সেনাবাহিনীর ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপাচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু সংকট: ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্যোগের তীব্রতা বাড়লে সেনাবাহিনীর দায়িত্বও বাড়বে।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রতিফলিত হয়:
জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব: সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু প্রতিরক্ষার জন্য নয়, বরং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ঐতিহাসিক ভূমিকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কেবল স্বাধীনতা সংগ্রামেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে এর উত্থানও গুরুত্বপূর্ণ।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যে ‘ডিফিকাল্ট সময়’ যে বিশেষ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়, তা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি সম্ভাব্য বিষয় উঠে আসে:
নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি আরও উত্তপ্ত হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীরও বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হতে পারে।
আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো বিষয়গুলো দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
অর্থনৈতিক চাপ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সামাজিক অস্থিরতা সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরদার করতে পারে।