কয়েকটি প্রাণী আপনার আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। ডাকলে কাছে আসে। কাছে আসতেই চায় আসলে। না এসে উপায় নেই। আগে ওদের পূর্বপুরুষ বনে থাকত। মানুষ তাদের নিয়ে এসেছে নিজেদের সমাজে। এখন তারা মানুষের দেওয়া উচ্ছিষ্ট পেলে বাঁচে। সারা জীবন ক্ষুধার লড়াইয়ে কাটে তাদের। প্রচণ্ড ক্ষুধায় কেউ তাদের ডাকল হাতে খাবার নিয়ে। প্রাণীগুলো বিশ্বাস করে এগিয়ে গেল। আর সেই খাবারই তাদের জীবনের শেষ খাবার হলো।
খাবারে মেশানো ছিল বিষ। রাতে এলাকাবাসী দেখলেন, কিছু কুকুর ও বিড়াল যন্ত্রণায় ছোটাছুটি করছে। রক্তবমি করে মারা গেল ১০টি পথকুকুর আর একটি বিড়াল। এ ঘটনা ঘটে ২২ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার জাপান গার্ডেন সিটিতে। সবার সামনে মারা গেল ওরা; কিন্তু বলে যেতে পারল না কে তাদের বিষ খাইয়েছে খাবারের সঙ্গে। কথা বলতে না পারার যে ক্ষমতাহীনতা, তার প্রথম বলি হয় এই প্রাণীগুলো।
এক প্রতিবেদনে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছিল যে আমেরিকায় অধিকাংশ সিরিয়াল কিলারের প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতার ইতিহাস আছে। ১৯৯৭ সালে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ম্যাসাচুসেটস সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস বিখ্যাত এক গবেষণা করেছিল।
সেখানে তারা দেখিয়েছে যে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ যারা করে, অন্য মানুষকে ক্ষতি করার আশঙ্কা তাদের পাঁচ গুণ বেশি। আমেরিকায় প্রায়ই স্কুলে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে মানুষ মারার ঘটনা ঘটে। এ রকম গুলি চালানো মানুষদের নিয়ে ২০১৩ সালে গবেষণাটি হয়েছিল। সেখানে পাওয়া গেল যে স্কুলে এ রকম গুলি চালানো ঘাতকদের ৪৩ শতাংশ কুকুর–বিড়ালকে মারধর করত।
আমাদের দেশের মানুষের তথাকথিত ‘মব জাস্টিসের’ প্রাবল্যের সঙ্গে পশুপাখির প্রতি আমাদের আচরণ এবার মিলিয়ে দেখতে পারেন। এ রকম কোনো গবেষণা না করেও বলা যায় যে যারা মানুষের সঙ্গে হিংস্রতা করেন না, সেসব নিরীহ মানুষও প্রাণীদের প্রতি কতটা নিষ্ঠুর।
এই সমাজ কি আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে একজন ‘সম্ভাব্য খুনি’ তৈরি করে রেখেছে? সুযোগমতো সেই খুনি বের হয়ে আসে গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারার জন্য? আর সেই সুযোগ যখন আসে না, তখন সে কুকুর–বিড়ালের গায়ে গরম পানি ঢেলে দেয়, ধারালো কিছু দিয়ে কোপ দেয়, জাপান গার্ডেনের মতো খাবারে বিষ দিয়ে মারে।
রাজবাড়ী জেলায় একবার একটি ঘোড়ার চার পা বেঁধে পায়ুপথে ও মূত্রনালিতে বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল কয়েকজন মিলে। ঘোড়াটা কারও ক্ষতি করেনি। তবে ঘাতকদের শত্রুতা ছিল ঘোড়ার মালিকের সঙ্গে। পত্রিকাতেও অভিভাবকের ওপর প্রতিশোধ নিতে শিশুহত্যার খবর তো হামেশাই পাওয়া যায়। ঠিক ওই ঘোড়াটার মতো হত্যা করা হয়েছিল বগুড়ার কাহালুর এবিসি টাইলস কারখানায় রাসেল ও রুবেলকে। পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে একইভাবে হত্যা করা হয়েছিল খুলনায় শিশু রাকিব ও নারায়ণগঞ্জে শিশু সাগর বর্মণকে। এই মিলগুলো কি চমকে ওঠার মতো মনে হচ্ছে? তাহলে আপনার আশপাশের মানুষগুলোর দিকেও নজর রাখবেন। প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা সামান্য কিছু বলে
মনে করবেন না। এর প্রতিবাদ করা নিজেকে নিরাপদ রাখার অংশ।