ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসাটা ইউরোপের নেতাদের নতুন বাস্তবতার মুখে দাঁড় করিয়েছে। তাঁদের সামনে এখন দুটি বড় ফাঁদ বা ভুল। এর একটি হলো ট্রাম্পের সম্ভাব্য নীতির বিষয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া, অপরটি হলো বাস্তবতাকে মোকাবিলা না করে পুরো পরিস্থিতিকে এড়িয়ে যাওয়া। এ দুই ফাঁদে পা দেওয়া থেকে তাঁদের বাঁচতেই হবে।
সমস্যা হলো, এ ফাঁদে পা দেওয়া থেকে নিজেদের বাঁচানো ইউরোপের নেতাদের পক্ষে সহজ হবে না; আবার এ ফাঁদ এড়াতে না পারলে ইউরোপকে অনেক বড় পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।
ট্রাম্পের ফিরে আসায় আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণগুলো স্পষ্ট।
ট্রাম্প এমনিতে কখন কী করে বসবেন, তা আগেভাগে বোঝা মুশকিল এবং তিনি অসম্ভব রকমের হঠকারী লোক।
তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রবৃত্তি এবং ঘোষিত পরিকল্পনা ইউরোপের নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্তম্ভগুলোকে কাঁপিয়ে দেবে।
নিরাপত্তা ইস্যুতে ইউরোপীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
প্রথমত, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ইউক্রেনের জন্য ‘শান্তিপরিকল্পনা’ ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে লঙ্ঘন করতে পারে এবং দেশটিকে নিরস্ত্র ও স্থায়ীভাবে ন্যাটো থেকে বাদ দিতে পারে।
ট্রাম্প গদিতে বসার পর যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোতে তার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে এবং সামরিক কমান্ড ও খরচাপাতির দায়দায়িত্ব ইউরোপীয়দের ওপর চাপিয়ে দেবে। এর ফলে ন্যাটো নিজেই হয়তো ‘নিষ্ক্রিয়’ অবস্থায় চলে যেতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ইউরোপীয়রা সংগত কারণেই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের ‘শান্তি নিশ্চিতকরণ’ পরিকল্পনার মানে হলো ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চরমপন্থী জোটের সম্প্রসারণমূলক পরিকল্পনাকে সমর্থন করা। এমনকি ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে বহিষ্কার করে মিসর ও জর্ডানে পুনর্বাসনের মতো পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ট্রাম্প গদিনশিন হওয়ার পর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর অবস্থায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
ট্রাম্প বাইরের দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ শতাংশের একটি সর্বজনীন আমদানি শুল্ক আরোপের কথা বলে রেখেছেন। আর চীনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলেও জানিয়ে রেখেছেন।
ট্রাম্পের এই নীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ লাগিয়ে দিতে পারে। সে ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে অন্য সরকারগুলো অর্থনৈতিক আঘাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
ট্রাম্পের কঠোর শুল্কনীতির মাধ্যমে যদি চীনকে মার্কিন বাজার থেকে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে ইউরোপীয়রা আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। কারণ, চীনের অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতার প্রভাব (ওভার ক্যাপাসিটি) ইউরোপীয়দের ওপর বেশি পড়বে।
ইউরোপের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। কারণ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকায় ইউরোপ এক হয়ে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তাদের এক হতে না পারার পেছনে ‘ইললিবারেল ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি তথাকথিত আন্তর্জাতিক জোট কাজ করবে। ওই জোটে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি রয়েছেন। এই নেতারা তাঁদের নীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী মানসিকতা দেখিয়ে থাকেন, যা ইউরোপের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রতিক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে।