‘আয়া রাম গয়া রাম’ কিংবা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ

সমকাল আকম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭

ভারতে বহুল প্রচলিত ও উচ্চারিত ‘আয়া রাম গয়া রাম’ প্রবচনের মূলে রয়েছেন হরিয়ানা রাজ্য বিধানসভার বিধায়ক গয়া লাল। ১৯৬৭ সালে তিনি এক দিনের মধ্যে তিনবার দল বদল করায় ভেঙে যায় বিধানসভা, জারি হয় রাষ্ট্রপতির শাসন। বর্তমানে ‘দলবদল’ আইনপ্রণেতাদের ডাকা হয় এই নামে।


গয়া লাল নির্দলীয় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। একদিন সকালে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে যুক্তফ্রন্টে যোগ দেন, ওই দিনই দুপুরের দিকে আবার কংগ্রেসে ফিরে যান। কংগ্রেস নেতা রাও বিরেন্দর সিং তখন চন্ডিগড় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে পাশে নিয়ে ঘোষণা দেন– ‘আয়া রাম গয়া রাম’। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের ৯ ঘণ্টার মধ্যেই গয়া লাল ফের যুক্তফ্রন্টে ফিরে যান। 


হরিয়ানার বিধায়ক গয়া লালকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের উক্তিটি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে প্রবচনে পরিণত হয়। ১৯৬৭ সালে ভারতে সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের নির্বাচিত কমবেশি ৩৫শ বিধায়কের মধ্যে ৫৫০ জনই বিভিন্ন সময়ে দল বদল করেন। কেউ কেউ একাধিকবারও দল বদল করেন। পরেও এই ধারা অব্যাহত থাকলে অতিষ্ঠ ভারতীয় লোকসভা ১৯৮৫ সালে সংবিধানের ৫২তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রণয়ন করে ‘আইনপ্রণেতাদের দলত্যাগ বিরোধী আইন’। আইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, রাজ্যসভা, লোকসভা বা বিধানসভার স্পিকার যদি মনে করেন কোনো সদস্য মনোয়নদাতা দলটি ত্যাগ করেছেন, তবে তাঁর সদস্যপদ বাতিল হবে। তবে দলের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য একযোগে দলত্যাগ করে নতুন দল বা উপদল গঠন করে বা ভিন্ন কোনো দলে যোগ দিয়ে সদস্যপদ বহাল রাখতে পারবেন।
আমাদের সংবিধান প্রণয়নকালে, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদের প্রায় সব সদস্যই ছিলেন ১৯৫৪-৫৮ সালের পূর্ব বাংলা সরকারের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। আবু হোসেন সরকার আর আতাউর রহমান খান পালাক্রমে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন একাধিকবার। আবু হোসেন সরকারের একবারের প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ৭৫ ঘণ্টা আর আরেকবার ১২ ঘণ্টা। এই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ভবিষ্যতে যাতে আইনপ্রণেতারা খেয়ালখুশিমতো দল বা সরকারের পতন ঘটাতে না পারেন, তারই প্রতিষেধক হিসেবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যুক্ত হয় অনুচ্ছেদ ৭০। নির্বাচিত সরকারের স্থায়িত্ব রক্ষা করাই ছিল এ অনুচ্ছেদ সংযুক্তির সপক্ষে প্রধানতম যুক্তি।



২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীমূলে ৭০ অনুচ্ছেদের শিরোনাম ‘রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া’। এর অধীনে সর্বশেষ বর্ণনা–‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি- (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা  (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’ 


অনুচ্ছেদটির শিরোনাম ও পাঠ ১৯৭২ সালের আদি সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের হুবহু একই রূপ। ২০১১ সালের আগে ১৯৭৫ ও ১৯৯১ সালে অনুচ্ছেদটি দু’বার সংশোধন করা হয়। প্রথমবার সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৫ সালের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী তথা বাকশাল প্রণয়ন সংশোধনীর মাধ্যমে। সেই সংশোধনীতে শিরোনাম বদলে হয় ‘পদত্যাগ ইত্যাদি কারণে আসন শূন্য হওয়া’, আদি বর্ণনা একই রেখে ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়–‘যদি কোন সংসদ-সদস্য, যে দল তাঁহাকে নির্বাচনে প্রার্থীরূপে মনোনীত করিয়াছেন সেই দলের নির্দেশ অমান্য করিয়া- (ক) সংসদে উপস্থিত থাকিয়া ভোটদানে বিরত থাকেন, অথবা (খ) সংসদের কোন বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।’


যেখানে মূল সংবিধানে কেবল পদত্যাগ বা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হওয়ার বিধান ছিল, সেখানে ১৯৭৫ সালের সংশোধনীতে সংসদের বৈঠকে উপস্থিত থেকে ভোটদানে বিরত থাকলে বা বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলেও কেল্লা ফতে হয়ে যেত। অনেকে বলে থাকেন, একদলীয় বাকশাল গঠনের ফলে যেহেতু দলের বাইরে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না, তাই কোনো সদস্য যাতে দলের বিরোধিতা করে ভোটদানে বিরত বা অনুপস্থিত থেকে প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিতে না পারেন, তা রোধ করার জন্যই এই ব্যাখ্যা যুক্ত করা হয়। 


১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী আইনে বিধানটি আরও বেশি কঠোর করা হয়েছিল। চতুর্থ সংশোধনীর পাঠ বহাল রেখে এই সংশোধনীতে অতিরিক্ত দুটি দফা যুক্ত করা হয়। দফা ২-এ সংসদীয় দলের ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হয় এবং দফা ৩-এর বর্ণনায় কোনো ব্যক্তি নির্দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করলে ৭০ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে ওই দলের মনোনীত প্রার্থীরূপে সংসদ সদস্যরূপে নির্বাচিত হয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এর ফলে নির্দলীয় সংসদ সদস্যদেরও দলীয় শৃঙ্খলার বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়। চতুর্থ ও দ্বাদশ সংশোধনীর কঠিন বেড়ি শিথিল করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদটি আদি অবস্থায় ফিরে যায়। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us