জাতি-নৃগোষ্ঠীর বিভ্রান্তি
জাতি ও জাতিসত্তা ধারণাগুলোর বহুমুখী ব্যাখ্যা রয়েছে। এসবের মাঝে ‘জাতীয়তা’, নৃগোষ্ঠী বা ‘জাতিত্ব’ (ethnicity) অথবা বর্ণের প্রলেপ মেশানো জাতি (race) ভিড় করায়, এ বিষয়ে পদ্ধতিসম্মত আলোচনা বেশ দুরূহ। যতদূর বুঝি, নিকট অতীতের (মাত্র বিগত পাঁচশ বছরে) ঔপনিবেশিক দখলদারদের দৃষ্টিতে, উপনিবেশ-ভূখণ্ডে অবস্থিত অনেক নৃগোষ্ঠীর মানুষকে দেখতে একই রকম মনে হতো। সাম্রাজ্য বিস্তারের একপর্যায়ে তারা, সম্ভবত একাধিক নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণকে একত্রে একটি শাসিত জাতি গণ্য করতে শুরু করে।
একইভাবে অনস্বীকার্য যে বিভিন্ন মহাদেশে সংগঠিত উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন, একক বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে লড়তে নেমে নিজেদের মধ্যকার পার্থক্য ভুলে, জাতিরাষ্ট্র (nation state) প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে ভেসেছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো এক বা কয়েকটি জোটবদ্ধ শক্তিশালী নৃগোষ্ঠী অন্যান্য দুর্বল নৃগোষ্ঠীর ওপর আধিপত্য এনে একক জাতি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এসব প্রক্রিয়ায় অনেকে একটি ‘জাতি’তে রূপান্তরিত হয়েছে বা হতে সচেষ্ট হয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী ছিল। ঔপনিবেশিক আমলের এ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ পশ্চিমা জ্ঞানভাণ্ডারে সর্বাধিক দৃশ্যমান হয় নৃবিজ্ঞান পাঠে। সম্ভবত সে কারণেই নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য তালিকায় পূর্বপুরুষ, বংশ, ভাষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতির বাইরে ধর্মকেও অনেক সময় অন্তর্ভুক্ত করা হয় (নেট সূত্রে)।