জাতিসংঘের সংস্কার সময়ের দাবি

প্রথম আলো ড. সেলিম জাহান প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ২২:৪৮

আজ ২৪ অক্টোবর, জাতিসংঘের জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য এবং শঙ্কা ও অভাব থেকে মানবজাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা। প্রায় আশি বছরেরও বেশি দিন ধরে বিশ্বশান্তি ও বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। অবশ্য জাতিসংঘের কথা উঠলেই সবাই তার ব্যর্থতার কথাই বলেন, তার অর্জনের কথা ঢাকা পড়ে যায়। সন্দেহ নেই যে জাতিসংঘের ব্যর্থতা অনেক, কিন্তু সাফল্যের ঝুড়িও তার নিতান্ত ছোট নয়।


রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সীমাবদ্ধতার কথা প্রায়ই বলা হয়; কিন্তু যদি একটি ছোট্ট প্রশ্ন করা হয় যে জাতিসংঘের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও সহিংসতাসংকুল বিশ্বের রাজনৈতিক চালচিত্র কেমন হতো, তাহলেই বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতিসংঘের ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা ঠিকভাবে বোঝা যাবে।


বিশ্বের নানান অংশে যুদ্ধ-বিগ্রহের সময়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার ক্ষেত্রে নানান সময়ে জাতিসংঘ যে শুধু তৎপরই ছিল তা নয়, সেসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফলে পৌঁছানোর বিষয়েও সংগঠনটি একটি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্দেশীয় সংঘর্ষের সময়ে শান্তিরক্ষা এবং সহিংসতা দূর করতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কাজ ব্যাপকভাবে আদৃত হয়েছে। যুদ্ধ ও সংঘর্ষ উদ্ভূত শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য জাতিসংঘের কর্মীরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন।


অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থাগুলোর কাজ ও অর্জনের কথা সুবিদিত। জাতিসংঘ শিশু সংস্থা; বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি; খাদ্য ও কৃষি সংস্থা; শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা; জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির কর্মকাণ্ড একদিকে বৈশ্বিক উন্নয়নকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে, তেমনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণে এবং ক্ষুধা নিবৃত্তিতে একটি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে।



বিশ্বের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং বজায়ক্ষম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়নে এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্বের নানান দেশে দুর্ভিক্ষ এড়াতে, মানবাধিকার নিশ্চিত করতে, কোটি কোটি শরণার্থীকে সাহায্য করতে জাতিসংঘ খাদ্য কর্মসূচি, মানবাধিকার এবং শরণার্থী সংস্থাগুলো নানান প্রতিকূলতা মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাজের জন্য জাতিসংঘ ও তার অঙ্গসংস্থাগুলো একাধিকবার নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।


কিন্তু তার এত সব সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘের ব্যর্থতাগুলোর তালিকাও নিতান্ত ছোট নয়। সংগঠনটির কাঠামোর স্বরূপ এবং প্রকৃতি, বড় বড় দেশের প্রভাব, হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ, তার কার্যক্ষেত্রে সীমিত স্বাধীনতা—সবকিছু মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিকতা ও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, একটি বিশেষ সময় ও বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের জন্ম হয়েছিল। গত আশি বছরে বিশ্ব বদলে গেছে, বদলে গেছে যে প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের জন্ম। ফলে গতকালের সংগঠন দিয়ে বর্তমান বাস্তবতার মোকাবিলা করা যাচ্ছে না, ভবিষ্যতের কথা না বলাই ভালো। বর্তমান অবস্থায় জাতিসংঘের কাঠামোগত সংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ন্যূনতম পক্ষে অন্তত পাঁচটি অঙ্গনে জাতিসংঘের মৌলিক সংস্কার দরকার।


প্রথম সংস্কার প্রয়োজন হবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষেত্রে। ‘এক দেশ, এক ভোট’—এমন একটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ যেখানে জাতিসংঘের নৈতিক ভিত্তিভূমি, সেখানে বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের গঠন ও কার্যপদ্ধতি জাতিসংঘের মূল্যবোধের পরিপন্থী। নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো ও কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দুই দিক থেকে সংস্কার করতে হবে। এক, পরিষদের স্থায়ী সদস্য কাঠামো এবং ‘ভেটো’ ক্ষমতা বিলোপ করা প্রয়োজন। ১৯৪৫ সালে বিশ্বে রাষ্ট্রসংখ্যা ছিল ৯৯, আজকে রাষ্ট্রসংখ্যা প্রায় ২০০।


সুতরাং নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যসংখ্যা ১৫ থেকে ২৫–এ বাড়ানো দরকার। নিরাপত্তা পরিষদের ২৫টি সদস্য সাধারণ পরিষদের সদস্যদের দ্বারা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি সদস্যের একটি ভোট থাকবে এবং কারোই স্থায়ী সদস্য পদমর্যাদা বা ভেটো ক্ষমতা থাকবে না।


কার্যক্রমের দিক থেকে রাজনৈতিক বিষয়গুলোই নিরাপত্তা পরিষদের কার্যপরিধির মধ্যে থাকবে। নিরাপত্তা পরিষদের পরিবর্তিত নাম হতে পারে ‘রাজনৈতিক নিরাপত্তা পরিষদ’। বর্তমান সময়ের মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে রাজনৈতিক নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে না। জনপ্রকাশ্যে পরিষদের সভা, বিতর্ক ও সিদ্ধান্ত অনুষ্ঠিত হবে। স্থায়ী সদস্যপদ ও ভেটো ক্ষমতার বিলোপ এবং জনপ্রকাশ্যে নিরাপত্তা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা পরিষদের গণতান্ত্রিকীকরণের জন্য অপরিহার্য।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us