স্কুলে কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে দাঁড়িয়ে গান গাইছিল। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তিন মাস পর মাধ্যমিক পরীক্ষা যাদের, তাদের এমন কর্মকাণ্ড শ্রেণিকক্ষের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া সহকারী প্রধান শিক্ষকের ভালো লাগল না। ক্লাসে ঢুকেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কারা গান করছিল?’ কথা বলল না কেউ। অগত্যা এগিয়ে গেল একটি ছেলে। বলল, ‘আমি, স্যার!’ স্যার তাকে অফিসে আসতে বললেন। ঘটল কল্পনাতীত ঘটনা। রেজিস্ট্রার খাতা থেকে নাম কেটে দিয়ে স্যার বললেন, ‘যাও, এবার গান গেয়ে বেড়াও! স্কুল থেকে তোমায় তাড়িয়ে দেওয়া হলো।’ স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া সেই ছেলে আর কেউ নন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আজ গুণী এই শিল্পীর চলে যাওয়ার দিন। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যু হয় তাঁর। হেমন্তের প্রয়াণদিবস উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা কথা।
ছেড়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিংও
গান গাওয়ার জন্য স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হলেও পরে অবশ্য বাবার অনুরোধে স্কুলে আবার ফিরতে পেরেছিলেন হেমন্ত। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনও পেয়েছিলেন।
অভাবের সংসার। বাবার স্বপ্ন ছিল, ছেলে পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হবে, তাঁর মতো টানাটানির জীবন যেন না হয়। তা ছাড়া হেমন্ত মেধাবী, লেখাপড়ায় ভালো। বাবা কালিদাস মুখোপাধ্যায় চেষ্টাও করেছিলেন সাধ্যমতো। পৈতৃক ভিটা ছেড়ে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন ভবানীপুরের ২৬/২–এ রূপনারায়ণ নন্দন লেনে। চাকরি করতেন ম্যাকনিন ম্যাকেনজির সাধারণ একটি পদে। নামেমাত্র বেতন ছিল। সংসারের উপশমে পাশাপাশি টিউশনিও করতেন। কিন্তু সামান্য উপার্জন দিয়ে মিত্র ইনস্টিটিউশনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়ানোর ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তারপরও পড়ালেখায় হেমন্তর পারঙ্গমতার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে অর্ধেক বেতনে কোনোক্রমে ভর্তি করেছিলেন। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়ে বাবার মানও রেখেছিলেন হেমন্ত। পরে বাবার কথামতো ভর্তি হয়েছিলেন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। কিন্তু গান তত দিনে পেয়ে বসেছে তাঁকে।