কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, ড. ইউনূস সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি, আমি নির্দ্বিধায় জবাব দেব, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং স্থিতিশীল থাকা।’ কারণ, সরকার টিকে থাকলে এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বাকি সব কাজ আগে হোক, পরে হোক, হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। থিসিস, অ্যান্টিথিসিস এবং সিন্থেসিসের তত্ত্ব অনুযায়ী, শপথগ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকার এখন অ্যান্টিথিসিস পর্যায়ে আছে, যেখানে স্বৈরাচার ও তার দোসররা সদা ক্রিয়াশীল। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা তা একের পর এক দেখে আসছি। প্রথমে চুরি, ডাকাতি, তারপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পাঁয়তারা, এখন গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা তৈরি ইত্যাদি। সরকার দৃঢ় ও কঠোর না হলে আগামী দিনগুলোতে এসব আরও ব্যাপক, বিস্তৃত হতে পারে, যা প্রতিহত করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
দেশের সর্বস্তরের মানুষের মতো আমিও এ সরকারের শতভাগ সাফল্য কামনা করি। কারণ, এর বিপরীত চিন্তা করাটা পাপ। কিন্তু মানুষমাত্রই ভুল করে এবং যিনি যত বড় দায়িত্বে থাকেন, তার ভুল তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য তত বিস্তৃত আকারে বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। সেজন্যই বলা হয়ে থাকে, রাষ্ট্রনেতা ভুল করলে দেশ ও জনগণের এবং দলনেতা ভুল করলে দলের এবং দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের জন্য সর্বনাশের কারণ হয়। যেমন স্বৈরশাসক হাসিনার ভুলের খেসারত সাড়ে পনের বছর দেশের জনগণ এবং এখন তার দলের কর্মী-সমর্থকরা দিচ্ছে। সুতরাং, ড. ইউনূস সরকারের সে রকম কোনো ভুল হোক, সেটি আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু কাম্য না হলেও তো ঘটে যেতে পারে। তাই প্রতিপদে সাবধান থাকা অত্যাবশ্যক।
ড. ইউনূস এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন। বিশেষ করে তার সুন্দর ও সুবাচনিক ভাষণ মানুষের মনে দাগ ফেলছে। তার যোগ্যতা নিয়ে এখনো কেউ কোনো প্রশ্ন করছে না। আমিও করছি না। কিন্তু এটি দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমি মাঠের মানুষ। ইতোমধ্যেই বেশকিছু বিষয় নিয়ে সাধারণের মধ্যে সন্দেহ না হলেও দোটানা ভাব কাজ করছে। তারা বুঝতে পারছেন না কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার কেন কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে, কোনো কোনো ব্যক্তিবিশেষের বা ব্যক্তিশ্রেণির প্রতি সরকারের, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে ড. ইউনূসের দুর্বলতার কারণ কী? এসব বিষয়ে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমও বেশ সোচ্চার। এমনকি যারা স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোতে সবসময় অব্যাহতভাবে অনলাইন লড়াই চালিয়ে গেছেন এবং তার পতনের পর এ সরকারের পক্ষাবলম্বন করছেন, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত।
স্থিতিশীলতার সঙ্গে টিকে থাকতে হলে যে কোনো সরকারকে প্রথমে শক্ত ও সুদৃঢ় কাঠামো তৈরি করতে হয়। যেমনটা ইমারত নির্মাণে করা হয়, যাতে তা ভূমিকম্প বা অন্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহনীয় হয়। রাষ্ট্র বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাঠামো তৈরি হয় এর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে। তাদের প্রজ্ঞা, নেতৃত্ব, কুশলতা, বাস্তবতাবোধ, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা, দৃঢ়তা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি থাকা বাঞ্ছনীয়। সে বিবেচনায় সরকারে এ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি নিয়োজিত হয়েছেন, তাদের কারও নাম উল্লেখ না করে মোটা দাগে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরলে বোঝা যাবে এ সরকারের মৌলিক ভিত্তি কতটা মজবুত এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলায় তা কতটা কার্যকর হবে।
প্রথমেই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিষয়টি দেখা যাক। তার গুণাবলি বর্ণনা করে শেষ করা কঠিন। আর এ সময় তার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছু বলা রীতিমতো ধৃষ্টতাপূর্ণ ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বলে অনেকের কাছে গণ্য হতে পারে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষই শতভাগ নিখুঁত নন। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাও নন। তিনি রাজনীতিবিদ নন, কাজেই রাজনীতির মারপ্যাঁচ তার ধাতে নেই। সে কারণে ২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়েও তিনি তা করতে পারেননি এবং স্বীকার করেছেন এটি তাকে দিয়ে হবে না। তিনি এখনো তাই মনে করেন, যা তিনি তার সাম্প্রতিক ভাষণে উল্লেখ করেছেন। অথচ রাষ্ট্রপরিচালনায় রাজনীতি জানা বা বোঝার বিষয়টি খুব জরুরি। বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, তিনি একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ এবং নিখাদ দেশপ্রেমিক। সমস্যটা এ জায়গায়। তিনি যদি উপদেষ্টামণ্ডলী ও অন্যান্য সহকর্মীকে ঠিকমতো বাছাই করতে না পারেন, তাহলে তিনি বিপদে পড়বেন এবং এ রকম আলামত রীতিমতো দেখা যাচ্ছে। সহকর্মীরা প্রধানত কয়েকটি কারণে তাকে ভুলপথে পরিচালিত করতে পারেন। প্রথমত, বিশেষ বিষয়ে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতার অভাব, ভুল বিচার। আমাদের এখানে ভুল বিচারের কারণে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলপথে পরিচালিত করার অসংখ্য নজির আছে। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রশাসনে পদোন্নতি, জেলা প্রশাসক নিয়োগ, হিন্দু কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া বড় উদাহরণ। এগুলোকে অনিচ্ছাকৃত সামান্য ভুল হিসাবে সরলভাবে গণ্য করা সমীচীন নয়। অপরাধী ও ষড়যন্ত্রকারীরা অনেক স্মার্ট।
কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করেন, ড. ইউনূস সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি, আমি নির্দ্বিধায় জবাব দেব, ‘ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং স্থিতিশীল থাকা।’ কারণ, সরকার টিকে থাকলে এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বাকি সব কাজ আগে হোক, পরে হোক, হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। থিসিস, অ্যান্টিথিসিস এবং সিন্থেসিসের তত্ত্ব অনুযায়ী, শপথগ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকার এখন অ্যান্টিথিসিস পর্যায়ে আছে, যেখানে স্বৈরাচার ও তার দোসররা সদা ক্রিয়াশীল। গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা তা একের পর এক দেখে আসছি। প্রথমে চুরি, ডাকাতি, তারপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর পাঁয়তারা, এখন গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা তৈরি ইত্যাদি। সরকার দৃঢ় ও কঠোর না হলে আগামী দিনগুলোতে এসব আরও ব্যাপক, বিস্তৃত হতে পারে, যা প্রতিহত করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
দেশের সর্বস্তরের মানুষের মতো আমিও এ সরকারের শতভাগ সাফল্য কামনা করি। কারণ, এর বিপরীত চিন্তা করাটা পাপ। কিন্তু মানুষমাত্রই ভুল করে এবং যিনি যত বড় দায়িত্বে থাকেন, তার ভুল তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য তত বিস্তৃত আকারে বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। সেজন্যই বলা হয়ে থাকে, রাষ্ট্রনেতা ভুল করলে দেশ ও জনগণের এবং দলনেতা ভুল করলে দলের এবং দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের জন্য সর্বনাশের কারণ হয়। যেমন স্বৈরশাসক হাসিনার ভুলের খেসারত সাড়ে পনের বছর দেশের জনগণ এবং এখন তার দলের কর্মী-সমর্থকরা দিচ্ছে। সুতরাং, ড. ইউনূস সরকারের সে রকম কোনো ভুল হোক, সেটি আমাদের কাম্য নয়। কিন্তু কাম্য না হলেও তো ঘটে যেতে পারে। তাই প্রতিপদে সাবধান থাকা অত্যাবশ্যক।
ড. ইউনূস এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন। বিশেষ করে তার সুন্দর ও সুবাচনিক ভাষণ মানুষের মনে দাগ ফেলছে। তার যোগ্যতা নিয়ে এখনো কেউ কোনো প্রশ্ন করছে না। আমিও করছি না। কিন্তু এটি দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমি মাঠের মানুষ। ইতোমধ্যেই বেশকিছু বিষয় নিয়ে সাধারণের মধ্যে সন্দেহ না হলেও দোটানা ভাব কাজ করছে। তারা বুঝতে পারছেন না কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার কেন কোনো কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে, কোনো কোনো ব্যক্তিবিশেষের বা ব্যক্তিশ্রেণির প্রতি সরকারের, আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে ড. ইউনূসের দুর্বলতার কারণ কী? এসব বিষয়ে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমও বেশ সোচ্চার। এমনকি যারা স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোতে সবসময় অব্যাহতভাবে অনলাইন লড়াই চালিয়ে গেছেন এবং তার পতনের পর এ সরকারের পক্ষাবলম্বন করছেন, তারাও এর অন্তর্ভুক্ত।