পুলিশ যখন নিষ্ক্রিয়ভাবে উপস্থিত

যুগান্তর হাসান মামুন প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৩২

হাসিনা সরকারের পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর সার্বিক পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, তার এক ধরনের মূল্যায়নের প্রয়াস দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে। এত অল্প সময়ের মধ্যে প্রেক্ষাপট বিচারে পরিস্থিতির কতটা উন্নতি সম্ভব, সে বিবেচনাও কম পরিলক্ষিত নয়। যে কোনো বড় পরিবর্তনের পর স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে একটা যৌক্তিক সময় লাগে বৈকি। কোন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে, সেটাও বিবেচ্য। জুলাইয়ের মধ্যভাগ থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত যেসব ঘটনার ভেতর দিয়ে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটা তো নতুন অভিজ্ঞতা। এ অঞ্চলের ইতিহাসে এমনি ধারার আন্দোলন এবং নিষ্ঠুরভাবে সেটা দমনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার ঘটনা সম্ভবত আর নেই। এটা গবেষণারও বিষয় বৈকি। এর মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণকারীরাও নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। এটা যে কত বড় চ্যালেঞ্জ, সেটা তারাও বোধহয় ক্রমে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন। এ অবস্থায় মাত্র এক মাসের ব্যবধানে তাদের কাজের মূল্যায়ন করে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যাওয়া সংগত নয়।


১৫ বছরেরও বেশি সময় টানা দেশ পরিচালনাকারী সরকার, প্রশাসন ও দল এখন পলাতক কিংবা কোণঠাসা। প্রশাসনের কথা অবশ্য আলাদা করে বলতে হয়। তাদের সবাই তো আর চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারেন না। সবাই দলবাজ হয়ে গিয়েছিলেন কিংবা অপরাধে লিপ্ত ছিলেন, তাও নয়। তবে তাদের এমন একটা ভাবমূর্তি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, যা খুবই গণবিরোধী। বিশেষ করে পুলিশকে অব্যাহতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে ‘ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছিল। কোনো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এত বড় ক্ষতি দুনিয়ার আর কোথায় হয়েছিল, সেটা গবেষণা করে দেখার বিষয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তাদের ব্যবহৃত হওয়ার ধরন দেখে সেটা যে কেউ সবচেয়ে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। এ ব্যাপারে ভিন্নমত জানানোর সুযোগ খুব কম। এ অবস্থায় পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার তরফ থেকে ভয়াবহ কিছু হামলারও শিকার হয়েছে। সিংহভাগ থানা হয়েছে আক্রান্ত। আগ্নেয়াস্ত্র লুট, গাড়িসহ নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগ্নেয়াস্ত্র হয়তো উদ্ধার করা যাবে; কিন্তু নথিপত্র? গাড়িসহ বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতি মেরামত ও প্রতিস্থাপনে ব্যয় বাড়বে রাষ্ট্রের। পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনাও রয়েছে। বিডিআরে বিদ্রোহের পরও তার পোশাক বদলানো হয়েছিল। তাতে একত্রে অনেক সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনাও ছিল নজিরবিহীন। এরপর একই সরকারের আমলে পুলিশের ভাবমূর্তির ক্ষতিটাও ভয়াবহ।


কীভাবে এই ক্ষতি পূরণ করা হবে, সে প্রক্রিয়া কিন্তু এখনো স্থির হয়নি। সব পুলিশকে কাজে ফেরানো যায়নি এক মাস চলে যাওয়ার পরও। সাম্প্রতিককালের ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের অবশ্য কাজে ফিরতেও দেওয়া হবে না। তাদেরকে বিচারে সোপর্দ করা হবে। সে প্রক্রিয়া চলমান। আর পুলিশে রদবদল হচ্ছে এখনো। এ অবস্থায় তাদের কাজে মন নেই। মনে অস্থিরতা। পুলিশ সদস্যদের অসংখ্য পরিবারে বিরাজ করছে অস্বস্তি। এ অবস্থায় তাদের কাছ থেকে ন্যূনতম সেবাটুকুও মিলছে না অনেক ক্ষেত্রে। মাঠে তাদের উপস্থিতি কম। সাধারণ মানুষের মধ্যে কাজ করতে নিরাপদও বোধ করছে না তারা। এমনকি রাত ১০টার পর অনেক স্থানে দায়িত্বরত দেখা যাচ্ছে না ট্রাফিক পুলিশকে। এতে যানজট পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, বিশেষত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।



পুলিশের কথাটা আলাদা করে তুললাম এজন্য যে, বিগত সরকারের আমলে প্রশাসনের মধ্যে পুলিশই হয়েছে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত ও ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের কাজ তৃণমূল পর্যন্ত সরাসরি দেখতে পায় মানুষ এবং পুলিশের ভূমিকাটা তারা পায় সরাসরি। পুলিশ একটা চলনসই সেবা দিলেও জনসাধারণের বড় অংশই ভাবে-‘দেশ তো খারাপ চলছে না’! দুর্ভাগ্যবশত এমন পরিস্থিতি এদেশের মানুষ কখনো সেভাবে পায়নি। ১৯৯০ সালের পর থেকে যখন নিয়ম করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসত, তখন দু-তিন মাস পুলিশকে মোটামুটি দায়িত্বপূর্ণভাবে কাজ করতে দেখা যেত। তারপর পুরোনো ধারায় ফিরে যাওয়া। বাকি জনপ্রশাসনের বেলায়ও একথা কমবেশি প্রযোজ্য। তবে বিগত সরকারের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন দল, সরকার ও প্রশাসন পরস্পরে বিলীন হয়ে গিয়েছিল বললে বাড়িয়ে বলা হয় না। তাই এমন প্রশ্নও উঠছে, এই পুলিশ আর প্রশাসন দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আসা একটি সরকার চাইলেও সুশাসন দেবে কীভাবে? পুলিশকে দিয়ে যে ন্যূনতম কাজটাও করানো যাচ্ছে না, সেটা তো এরই মধ্যে স্পষ্ট। অভিযুক্ত নয়, এমন পুলিশ সদস্যও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারছে না। অনেকে ইচ্ছা করেও করছে না। তারা হয়তো ভাবছে, এত বড় একটা বাহিনীকে তো আর বিলুপ্ত করে দেবে না সরকার।


‘অঙ্গীভূত আনসার’ সদস্যদের একাংশ সচিবালয়ে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে বড় ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। পুলিশে এরও প্রভাব পড়েছে মনে হয়। তাদের অনেক নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সেনাসদস্যদের। তাদের আবার বিতর্ক এড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। মিডিয়ায় সব খবর সরাসরি না এলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় তো সব পক্ষই সক্রিয়। সেখানে এমন কিছু ‘খবর’ দ্রুত এসে যাচ্ছে, যা একটি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারের জন্য বিব্রতকর। খুলনা ও রাজশাহীতে দুটি গণপিটুনিতে একজন গুরুতর আহত হওয়া ও অপরজনের মৃত্যুর খবরে বিবেকবান মানুষমাত্রই বিচলিত। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মতবিনিময়ের সময়ও বিষয়টি এসেছে। সেটাই স্বাভাবিক। এটাও স্বাভাবিক যে, ‘উত্তেজিত জনতার হাতে’ এভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সরকার কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তবে এটা বলাই যথেষ্ট নয়; এসব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের নামে হত্যাকাণ্ড চালানোর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি এদেরও বিচার হওয়া দরকার। বিশেষত একটি সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘটা যে কোনো অপরাধমূলক ঘটনার বিচার দেরিতে হলেও হতে হবে। কোনো কোনো অপঘটনার বিচার আবার দ্রুততার সঙ্গে করা প্রয়োজন। কেননা এর সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত। কোনো কোনো ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নেতিবাচকভাবে আলোচিত হয়ে থাকে। দেশেও সব মহলে যত দ্রুত সম্ভব এ আস্থা জাগানো প্রয়োজন যে, সরকার যথাযথ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। আর এ কাজে পুলিশের ভূমিকা জরুরি বলেই এ বাহিনী নিয়ে বলতে হচ্ছে এত কথা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us