‘অমীমাংসিত’র মীমাংসা হয়নি, অপেক্ষা বাড়ল’, ‘অনুমতি পেল না ‘অমীমাংসিত’, ‘সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত’, ‘অমীমাংসিত’ প্রদর্শনযোগ্য নয়!’ ‘অমীমাংসিত’ প্রদর্শনের অনুপযোগী!
এপ্রিল-মে মাস ধরেই দেশের সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সংবাদ বিভিন্ন শিরোনামে গুরুত্বপূর্ণভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায় রায়হান রাফী পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অমীমাংসিত’ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র না মেলায় তা আর সম্ভব হয়নি।
গত ২৫ এপ্রিল চারটি বিশেষ কারণ দেখিয়ে চলচ্চিত্রটিকে দর্শকের সামনে অপ্রদর্শনযোগ্য বলে রায় দিয়েছিল চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। ১) চলচ্চিত্রটিতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে ২) কাল্পনিক কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে ৩) এ ধরনের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ৪) চলচ্চিত্রটির কাহিনি/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সঙ্গে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
এ বিষয়ে পরিচালকের ভাষ্যও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, “বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেছে, তাই এটা মুক্তি দেওয়া যাবে না। সিনেমা হতে হবে অবাস্তব।” তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আরও বলেন, “বিষয়টা তাহলে এমন, কোনো সিনেমায় কোনো সাংবাদিক দম্পতি খুন হতে পারবে না?...তাহলে কি সিনেমায় কোনো মেয়ে গুম হয়ে খুন হলে তা কুমিল্লার তনুর সঙ্গে মিলানো হবে? সিনেমায় কোনো কিশোরের লাশ নদীতে পাওয়া গেলে, তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকাণ্ড মিলানো হবে?”
ঘটনাক্রম এবং পরিচালকের বক্তব্য আমাদেরকে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অভিমন্যুর মতো চক্রবুহ্যের আবর্তে থাকা আমরাও আজও জানি না এ বুহ্য থেকে বেরোবার পথ কী?
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের বাসায় নির্মমভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। নির্মম এ খুনের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় এ পর্যন্ত ১০৫ বার পিছিয়েছে। সর্বশেষ এ বছর তদন্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, “পুলিশ যদি তদন্ত শেষ না করতে পারে, তাহলে জোর করে সেই তদন্ত সমাপ্ত করে একটা চূড়ান্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়াটা কি ঠিক? তাদের তদন্তে সঠিকভাবে দোষীকে নির্ণয় করতে তাদের সময় দিতে হবে, তাতে যদি ৫০ বছর লাগে, তাহলে ৫০ বছর সময় দিতে হবে।” অর্থাৎ যারা সাগর–রুনি খুনের বিচার চান তাদের ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হবে তদন্ত প্রতিবেদন কি হবে তা দেখার জন্য। তবে এই প্রতিবেদন পেতে যদি ১০০ বছরও লেগে যায় অবাক হবার কিছু থাকবে না। আর বিচার প্রক্রিয়া, সে তো তদন্ত শেষ হলে তারপর শুরু হবে। সেটা শেষ হতে আবার কতদিন প্রয়োজন পড়বে তা মন্ত্রী মহোদয় তখন বলেননি অবশ্য। ফলে সার্বিকভাবে আদালতগুলোতে মামলার জট বিবেচনায় সাগর–রুনি হত্যার বিচার পেতে কত বছর অপেক্ষা করতে হবে তা অনুমান করা সম্ভব না, আর এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দক্ষতা, যোগ্যতা, জবাবদিহিতা, দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার অধিকার সাধারণ জনগণের আছে বলেও মনে হয় না। এমনকি সরকার পরিবর্তনের আগপর্যন্ত কোনো গণমাধ্যমে লেখালেখি করার উপায় পর্যন্তও ছিল না, শুধু অবাক বিস্ময়ে জনসেবার নমুনা দেখা ছাড়া।
বাংলাদেশের সরকারি দফতরে কর্মরত মানুষের কর্মদক্ষতার যে নমুনা আগে-পরে আমরা দেখেছি তাতে সাগর-রুনি খুনের মামলার তদন্ত করতে তাদেরকে ৫০ বছর সময় তো বিনা প্রশ্নে দেয়া যেতেই পারে! তবে খুনের ঘটনার পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটনের অঙ্গীকার করেছিলেন। তারপর কত ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। প্রাথমিক কয়েকদিন পুলিশ তারপর কয়েক মাস ডিবি এবং সেখান থেকে এখনও র্যাব তদন্ত করে চলেছে। প্রথম প্রথম আশার বাণী শোনা যেত আর এখন শুনতে হয় তদন্ত শেষ হয়নি, সময় প্রয়োজন।