মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, বাংলাদেশের আট-দশজন তরুণের মতোই দিনবদলের স্বপ্ন দেখতেন। চাকরি করার চেয়ে নিজের উদ্যোগ দাঁড় করানোর চেষ্টা ছিল সব সময়। করোনা মহামারির সময় নিজের যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর দেখানো পথে মুগ্ধ ফ্রিল্যান্সি আউটসোর্সিংয়ের জগতে পা রাখেন। কাজের পরিধি ও দক্ষতা দুই বছরে অনেক বেড়ে যায় মুগ্ধর। মুগ্ধ, স্নিগ্ধ ও তাঁদের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত—তিন ভাই মিলে স্মার্ট কোড ওয়ার্ল্ড নামে একটি ইন্টারনেট আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান শুরু করেন চলতি বছর। গতকাল শনিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দীপ্ত বলেন, ‘মুগ্ধ ও আমরা সব সময় আইনকানুন মেনে কাজ করতে চাই। তাই স্মার্ট কোড ওয়ার্ল্ডকে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করতে আমরা ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আবেদন করি। আমাদের চাচার বাসার ঠিকানা ব্যবহার করে আমার নামে এই কোম্পানির ট্রেড লাইসেন্স করি।’
মুগ্ধ ও তাঁর ভাই-সহকর্মীরা মিলে গত মাসের শুরুতে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁদের স্মার্ট কোড ওয়ার্ল্ডের জন্য ডিএনসিসি ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে গত ১৮ জুলাই। তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ। ইন্টারনেট চালুর পর ট্রেড লাইসেন্সটা পান তাঁরা। তারিখটা দেখে মুগ্ধর দুই ভাইয়ের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যায়। দীপ্ত বলেন, ‘এখন ট্রেড লাইসেন্স পেয়েছি, কিন্তু মুগ্ধকে পাচ্ছি না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে যে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা, সেই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধও। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার দিনটিতেই অর্থাৎ গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় গুলিতে নিহত হন মুগ্ধ। আন্দোলনকারী ছাত্রদের জন্য পানি নিয়ে রাস্তায় থাকতেন তিনি। ‘পানি চাই, পানি চাই’ বলে সবাইকে পানি দিতেন। তাঁর মৃত্যু ছুঁয়ে যায় সবাইকে। আবেগ সামলে দীপ্ত বলেন, ‘মুগ্ধ চাইত আইনকানুন মেনে, কর দিয়ে সব করতে। মুগ্ধর কাজের ল্যাপটপ-টেবিল আর অনেক কাজ রয়ে গেল, মুগ্ধটা আর থাকল না আমাদের মধ্যে। এই মনে হয় মুগ্ধ গ্রুপচ্যাটে নক দিয়ে নতুন কাজের কথা বলবে বা নতুন কোনো পাগলামির কথা জানাবে আমাদের। আমাদের বাবা-মা এ মাসেই ওমরাহ হজ করতে যাবেন। মুগ্ধ নেই, এটা আসলে তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।’