অস্থির সময়ে

আজকের পত্রিকা জাহীদ রেজা নূর প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১১:০৬

গতকালই আমি লিখেছিলাম, ‘এই বেলা থেকে বাঁধনটাতে দাও মন’ নামে একটি উপসম্পাদকীয়। একটি রাষ্ট্র যখন চলনশক্তি হারিয়ে ফেলে, যখন তাকে টেনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তখন তাকে বাঁচাবার উপায় কী—এ-ই ছিল লেখার বিষয়।


ঘুরেফিরে বলেছিলাম, মানুষে মানুষে বাঁধনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকেই রাখতে হবে চোখ।


৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকার আর টিকে থাকতে পারেনি। সরকার পতনের পর সেনাপ্রধান বলেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা। চলমান সংকট থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। রাজপথে বেরিয়ে আসা মানুষকে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছেন।


রাজপথে বেরিয়ে আসা জনগণ আনন্দ-উল্লাস করেছে। তবে সেনাপ্রধানের এই আহ্বানে খুব একটা সাড়া দেয়নি। সেনাপ্রধানের ভাষণ শেষ হওয়ার আগে থেকেই ঢাকা শহরে ছিল মানুষের ঢল। তাঁর ভাষণ শেষ হতে না হতেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন অঞ্চলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেল। পাকিয়ে পাকিয়ে উঠল কালো ধোঁয়া। পোড়ানো হলো স্থাপনা। টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গেল গণভবনের অবস্থা। সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়েছেন। সেই ভবনে ঢুকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এবং সে ভবনে যা কিছু ছিল, তা লোপাট হয়ে গেছে মুহূর্তেই। চলতি পথে দেখা গেল কেউ এয়ারকন্ডিশনার, কেউ আলমারি, কেউ ফুলের টব, কেউ পেইন্টিং নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। কেউ শাড়িও নিয়েছেন। এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিও দিয়েছেন।


জিজ্ঞেস করলে কেউ কেউ বলেছেন, এগুলো জনগণের সম্পত্তি।


আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটা অসাধারণ পঙ্‌ক্তি রচনা করেছিলেন, ‘ভেঙে আবার গড়তে জানে, সে চির সুন্দর।’ আমাদের ইতিহাসে ভেঙে আবার গড়ার ব্যাপারে গাফিলতি আছে। আমরা যতটা ভাঙতে পারি, ততটা গড়তে পারি না বলে আমাদের দুর্নাম আছে।


যেকোনো বড় বিক্ষোভের সময় অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে। বিজয়ী শক্তি পরাজিত শক্তির ওপর প্রতিশোধ নেয়। শ্রীলঙ্কায়ও এমন হয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা থাকাটা জরুরি। যত কম সময়ে এই অরাজকতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক সময়ে ফিরে আসা যায়।


ঢাকাসহ সারা দেশে জ্বালাও-পোড়াও-এর মতো যে ঘটনাগুলোর খবর আমরা পাচ্ছি, তা প্রতিরোধ করতে না পারলে এই পরিবর্তন কোনো কাজেই লাগবে না। আন্দোলনের সময় যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছিল, তারই প্রতিবাদে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল জনগণ। সেই হত্যাকাণ্ডেরই যদি পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে অর্জন কোথায়?


বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেউ যেন লুটপাটের সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। লুটপাটকারীদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাস্তাঘাটে লুটপাটের মালসহ অনেককে দেখা গেছে, কিন্তু কেউই তাদের বাধা দেয়নি। কেউই তাদের রুখে দাঁড়ায়নি। নৈরাজ্য কখনোই একটা অর্জনকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিতে পারে না।   


বাংলাদেশকে সত্যিকারের বৈষম্যহীন একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা দরকার। সেই চর্চাটা আমাদের দেশে প্রায় নেই বললেই চলে। সাধারণ নিয়মেই কোনো দল নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে, জয়ী হতে পারে। জয়ী দল ক্ষমতায় এসেই পরাজিত দলের লোকদের বাড়িঘরে আগুন দিলে, লুটপাট করলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে কী করে? এই তো কিছুদিন আগে যুক্তরাজ্যে নির্বাচন হয়ে গেল। ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টিকে শোচনীয় পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টি। কিন্তু এই জয়-পরাজয়ে কোথাও কোনো ভাঙচুর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ক্ষমতা ছেড়েছেন, তাঁর দলের সদস্যদের কাছে পরাজয়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। আমাদের দেশে সেই ঐতিহ্য কবে গড়ে উঠবে? আমাদের দেশে কোনো দল নির্বাচনে পরাজিত হলে জয়ী দলের প্রতি সূক্ষ্ম কারচুপি কিংবা স্থূল কারচুপির অভিযোগ কেন আনবে? কোনোভাবেই নিজের পরাজয় মেনে নিতে চায় না কেন রাজনৈতিক দলগুলো? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে হলে এই জায়গাটিতে তো বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us