হাতুড়ে চিকিৎসায় কি জটিল রোগ সারে?

যুগান্তর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৮

কোটা আন্দোলনের নামে যে ব্যাপক গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে দেশ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বলা যায়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে, আন্দোলন দমনে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়েছে। সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, বিজিবি এবং সবশেষে সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামাতে হয়েছে। আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়েছে। এতেও গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকারকে শেষ অস্ত্র হিসাবে করফিউ জারি করতে হয়েছে। এ থেকে সরকারের ওপর ছাত্রছাত্রী, যুবক ও জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের পরিমাণ আঁচ করা যায়।


সরকার যদি মনে করে, দমন-পীড়ন, গায়েবি মামলা ও জেল-জুলুমের মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে, তাহলে সে সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক বা ভুল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ ক্ষোভ যে শক্তি প্রয়োগ করে দমন করা যায় না, সে বিষয়টি বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের অনেক দেশেই প্রমাণিত হয়েছে।


কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো একটি সাধারণ বিষয়কে আদালতের মাধ্যমে সমাধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ভালো হয়নি। একটি নির্বাহী বিষয় কেন এবং কী প্রক্রিয়ায় বিচারিক বিষয়ে পরিণত হলো এবং এ ব্যাপারে কেনই বা গড়িমসি করা হলো, তার নির্মোহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রয়োজন। অনেকে বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ, সাবেক পুলিশ ও র‌্যাবপ্রধান বেনজীরসহ আরও যেসব প্রশাসনিক কর্মকর্তার মেগা দুর্নীতি উন্মোচিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তিকে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছিল, এমন সময় সেদিক থেকে গণদৃষ্টি অন্যত্র ফেরাতে সরকার প্রথমদিকে কোটা আন্দোলন সমাধানে ত্বরিত মনোযোগ দেয়নি। তা না হলে মাননীয় সরকারপ্রধান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনের সূচনাকালে আলাপ-আলোচনা করে স্বল্প সময়ে সহজে এ বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারতেন। এর আগে আদালতের একটি খণ্ডিত ও বিতর্কিত রায়ের ওপর ভর করে এ সরকার যেভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছিল, কোটা আন্দোলনে সেই একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বিবেচনাপ্রসূত হয়েছে কিনা তা নিয়ে ভাবার আছে।


পরবর্তীকালে কারফিউয়ের মধ্যে আদালত বসিয়ে কোটা বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি করে রায় দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পরও বিষয়টির চূড়ান্ত ফয়সালা হয়েছে ধরে নেওয়া যায় না। কারণ, ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ২৫ তারিখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হতাহতদের তালিকা তৈরি করা, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ আটটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। আপিল বিভাগের শুনানি ও রায়ের পর সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করলে কোটা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা মনে করছেন না।


কোটা সংস্কার বিষয়ে আমি আগেও ২০১৮ ও ২০২৪ সালে কথা বলেছি ও লিখেছি। আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অন্যরকম। নিজের ব্যাখ্যায় আমি বলে থাকি : জনাব ‘ক’ যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধ করেন, তবে তার শাস্তি জনাব ‘ক’ পাবেন। তার সন্তান পাবেন না। একইভাবে জনাব ‘খ’ যদি কোনো প্রশংসনীয় কাজ করে থাকেন, তবে তার প্রশংসা বা পুরস্কার জনাব ‘খ’ পাবেন। তার সন্তানরা পাবেন না। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বিরাট গর্বের কাজ। জীবনবাজি রেখে এ কাজে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদেরকে নির্দ্বিধায় সর্বোচ্চ সম্মান ও পুরস্কার দেওয়া কাম্য। তবে এ সম্মান যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা অন্য কারও প্রাপ্য নয়। ছেলেমেয়ে, নাতিপুতিরা তো আর যুদ্ধ করেননি। তারা কোন যুক্তিতে সে সম্মান দাবি করবেন? তাদের মধ্যে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হওয়াও কি একেবারেই অস্বাভাবিক? কাজেই বাছবিচার না করে কেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতিপুতি হলেই তাদের সবাইকে চাকরিক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে সম্মানিত করা হবে, তা অনেকের কাছে বোধগম্য নয়। এমন কাজ তো সরকারের সুযোগ্য ও পেশাদার প্রশাসন গড়ে তোলার অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।


সরকার যদি মনে করে, কেবল চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য তরুণ-যুবকরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাহলে ঠিক হবে না। একমাত্র কোটা সংস্কারের জন্যই সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আক্রমণ চালানো হয়েছে বললেও যথার্থ হবে কি? রাজনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এ আন্দোলন ও সহিংসতাকে বিবেচনা করেন দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রহীনতা, সুশাসনের অনুপস্থিতি, নিত্যপণ্যের অস্বভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটবাজি রোধে সরকারি ব্যর্থতা, ব্যাপক দুর্নীতি বৃদ্ধি, শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতা, প্রশাসনিক সেবাদানের মান নিুগামী হওয়া ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ার কারণে জনমনে ক্রমান্বয়ে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের এক মহাবিস্ফোরণ হিসাবে। আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ ছাড়া এমন গণবিক্ষোভ শক্তি প্রয়োগ করে দমন করার প্রচেষ্টাকে হাতুড়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন বলা অসংগত হবে কি?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us