জানালার পাশেই সামিরের পড়ার টেবিল। পড়ার বই, প্লাস্টিকের খেলনা, ঘরের মেঝেতে এখনো ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। গত শুক্রবার জানালা দিয়ে আসা একটি বুলেট সামিরের চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ১১ বছরের সাফকাত সামির।
ওই দিন (১৯ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে মিরপুরে কাফরুল থানার সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া ঢুকছিল সামিরের ঘরে। জানালা বন্ধ করতে গেলে বাইরে থেকে গুলি এসে বিদ্ধ করে শিশুটিকে। গুলিটি তার চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘরে ছিল তার চাচা মশিউর রহমান (১৭)। তার কাঁধেও গুলি লাগে।
গতকাল মঙ্গলবার সামিরদের বাসায় গিয়ে নির্মম মৃত্যুর চিহ্ন দেখা যায়। নানাবাড়ি আশুলিয়ায় একমাত্র সন্তানকে দাফন করে মা ফারিয়া ইবনাত (২৮) সেখানেই রয়ে গেছেন। বাবা সাকিবুর রহমান (৩৪) মিরপুরের ছোট্ট বাসাটিতে ফিরে এসে সন্তানের স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছোট চাকরি করেন। শিশু সামির একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত।
সাকিবুর রহমানের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তাঁর চোখের পানি থামছিলই না। তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে তিনি পাশেই বকুলতলা মাঠের কাছে ছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি হচ্ছিল দেখে বাসার দিকে রওনা দেন তিনি। এমন সময় এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে বাসায় গুলি ও রক্তের সংবাদ পান। দ্রুত বাসায় এসে দেখেন, তাঁর একমাত্র সন্তান রক্তাক্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তাকে কোলে নিয়ে ছুটে যান পাশের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। চিকিৎসক বলেন, শিশুটি আর বেঁচে নেই।