হালদা নদী শুধু দেশের জন্যই গর্ব নয়, এটি এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। হালদা ঘিরে গড়ে উঠেছে আলাদা গবেষণাকেন্দ্র। সরকারি-বেসরকারি অনেক কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে এ নদীকে ঘিরে, যার কোনো কোনোটি বেশ প্রশংসাও কুড়ায়। তবে এ নদীর সুরক্ষায় যতটা মনোযোগ দেওয়ার কথা ছিল, তা যথাযথভাবে হচ্ছে কি? নয়তো কী করে বিভিন্ন কারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে হালদা। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
খাগড়াছড়ির রামগড়ের পাহাড়ি ঝরনা থেকে উৎপত্তি হওয়া হালদা নদী কয়েকটি উপজেলা হয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে এসে মিশেছে। এ নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কোনো কোনো জায়গায় এর ব্যত্যয় ঘটছে।
বিশেষ করে তদারকির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। ১২ জুন প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পাঁচটি খালের ভেতর দিয়ে বিভিন্ন কারখানা ও গৃহস্থালি বর্জ্য এসে হালদায় পড়ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁওয়ের বাহির সিগন্যাল এলাকায় গড়ে ওঠা জুতা, প্যাকেজিং কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যও সরাসরি খালে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া নগরের অক্সিজেন, চান্দগাঁও, কুলগাঁও এলাকার কারখানার বর্জ্য এবং আবাসিক এলাকার গৃহস্থালি বর্জ্যও পড়ছে এ নদীতে।
হালদার যেসব জায়গায় বর্জ্য পানিতে গিয়ে মিশেছে, সেখানকার পানি পরীক্ষা করে গবেষকেরা দেখেছেন, তা কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত নয়। কারখানার বিষাক্ত, তৈলাক্ত ও উৎকট দুর্গন্ধময় বর্জ্যে নদীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়াই স্বাভাবিক। শুধু তা-ই নয়, দূষণের কারণে কৃষিকাজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো কাজই করতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দা। এতে অন্তত তিন হাজার জেলের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় এক হাজার একর জমির চাষাবাদ। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হালদার পারে।
এখন হালদা নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে আর এ সময়েই প্রকট হয়ে উঠেছে দূষণ। অথচ এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো উদ্যোগ নেই। হতাশাজনক বিষয় হচ্ছে, কর্তৃপক্ষটির কর্তারা নতুন করে হালদায় বর্জ্য মিশে যাওয়ার বিষয়টিই অবগত ছিলেন না। তবে তাঁরা বলছেন, কোন কোন কারখানা বা কারা এই দূষণের সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।