আজকের আলোচনার শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে যে ‘অর্থনীতির চালচিত্র’ কথাটি জুড়ে দেওয়া হলো, সেটা খুব যুক্তিসংগত হয়েছে। কারণ, সামগ্রিক অর্থনীতির যে টানাপোড়েন ও অস্থিরতা চলছে, তার প্রেক্ষাপটেই বাজেটকে দেখতে হবে।
অর্থনীতির বর্তমান অস্থিতিশীলতা বা ভঙ্গুরতার লক্ষণগুলো কী। অব্যাহত মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক রিজার্ভের পতন, রাজস্ব সংগ্রহের স্বল্পতা, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের স্থবিরতা, পুঁজি পাচার, ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা, সর্বব্যাপী দুর্নীতি ও সরকারি ব্যয়ের অনিয়ম-অপচয়, জবাবদিহিহীনতার সংস্কৃতি এবং বৈদেশিক অভ্যন্তরীণ খাতের ঋণের সুদ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান দায়।
এ পরিস্থিতির সীমাবদ্ধতার মধ্যে প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবসম্মত যেমন বলা যায়, আবার যূপকাষ্ঠে বাঁধা বলির পশু বলেও মনে হতে পারে (ইংরেজিতে যাকে সেক্রিফিস্যাল ল্যাম্ব বলে), যার হাত-পা বাঁধা, নড়াচড়া করার খুব সুযোগ নেই। আমি অর্থমন্ত্রীর প্রতি কোনো ইঙ্গিত করছি না—তিনি আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।
অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সংকোচনমূলক বাজেটের, যা জিডিপির মাত্র ১৪ শতাংশ, এর কোনো বিকল্প ছিল না। যদিও এটাকে সংকট উত্তরণের একটা সাময়িক ব্যবস্থা বলা হয়েছে।
রাজস্ব-জিডিপির বর্তমানের এত নিম্নহার নিয়ে একটা উন্নয়নকামী অর্থনীতির জন্য ন্যূনতম যে আকারের বাজেট দরকার, তার জন্য অর্থের সংকুলান সম্ভব নয়।
মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতার বিবেচনায় বাজেটের ঘাটতি সীমিত রাখতে হয়েছে, যার ফলে সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ব্যয়ের সংস্থান করাও কঠিন হয়ে গেছে।
এর ওপর আছে ভর্তুকি, বিশেষত, বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের বাড়তি বোঝা। আবার বাজেট ঘাটতির বড় অংশই ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মেটাতে হবে। কারণ, বর্তমান অবস্থায় নতুন টাকা ছাপানো বিপজ্জনক। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ সংকুচিত হবে (মাত্র ৯ শতাংশ যখন বাড়বে বলে ধরা হয়েছে)।
এই ঋণ সংকোচনের মধ্যে আবার খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে বলে নতুন করে ঋণ দেওয়াও কঠিন হবে। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অবাস্তব মনে হতে পারে।