শুধু কি গতানুগতিক বক্তৃতাই হবে

আজকের পত্রিকা ড. আর এম দেবনাথ প্রকাশিত: ০৫ জুন ২০২৪, ১২:২৬

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঘোষিত হবে নতুন অর্থবছর ২০২৪-২৫-এর বাজেট। এই সময়ে সরকারের সামনে অনেক কাজ, অনেক করণীয়। তিনটি অবশ্যকরণীয় হচ্ছে: প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দ্বিতীয়ত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং তৃতীয়ত ও শেষত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এর মধ্যে, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। মানুষ বড়ই কষ্টে আছে, ঋণ করে খাচ্ছে, যা কিছু সঞ্চয় আছে, তা ভেঙে খাচ্ছে। ভোগের পরিমাণ কমিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে। তাদের বাঁচানো দরকার। কীভাবে? মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব? দুই বছর যাবৎ চেষ্টা হচ্ছে, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।


সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সবাই চেষ্টা করেও পারছে না। নতুন অর্থমন্ত্রীরও কিছুদিন কেটে গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব মজুমদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিব আবদুর রহমান খান। তিনজন চেষ্টা করেও কোনো ফল দেখাতে পারছেন না। এদিকে বাজারের সুপারিশ অনেক। কেউ বলছেন, পণ্যের ‘সিন্ডিকেট’ আমাদের সর্বনাশ করছে। একে ভাঙা হোক। কেউ বলছেন, বিশেষ করে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা দায়ী মূল্যস্ফীতির জন্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘সিন্ডিকেট’ বলতে কিছু নেই। যা হচ্ছে ‘বাজারই’ (মার্কেট) তা করছে। এখানে অন্যদের কোনো কারসাজি নেই।


অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাণিজ্যনীতির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কেউ দুষছেন ডলারকে, ডলারের অবিশ্বাস্য মূল্যবৃদ্ধিকে। কারণ আমরা পান থেকে চুন সবই আমদানি করে খাই। কিছুটা বাঁচা গেছে চালে। অনেকে বলছেন, এটা হচ্ছে সমান্তরাল সরকারি বণ্টনব্যবস্থার অভাবে। এখন প্রশ্ন কে ঠিক, কে বেঠিক? মুশকিল হচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেক সময় লাগবে। আমাদের দরকার সমাধান, স্থায়ী সমাধান। কারণ ‘বাজার’ শুধু গরিব, নিম্নবিত্তকে সর্বস্বান্ত করছে না, ‘বাজার’ মধ্যবিত্তকেও শেষ করে দিচ্ছে। এখানেই প্রশ্ন, ‘বাজার’ যদি তার মূল জায়গাটাকেই নষ্ট করে দেয়, ‘বাজার’ যদি ক্রেতাদেরই দূরে সরিয়ে দেয়, তাহলে ‘মার্কেট ইকোনমি’ হবে কীভাবে? হবে কি কম ভোগে এবং অতিধনীদের ভোগে? নাকি ক্রেতা তৈরি হবে ‘ক্রেডিটের’ মাধ্যমে, ‘ক্রেডিট কার্ডের’ মাধ্যমে? অনেক প্রশ্ন এখন মনে। আমি ভাবছি অর্থমন্ত্রীর দুর্দশার কথা। কোন দিকে তিনি যাবেন? বৃহস্পতিবার তিনি কী করবেন?


বাজেটের আকার, উন্নয়ন বাজেটের আকার, রাজস্ব আয়, রাজস্ব ব্যয়, কর প্রস্তাব, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক রিপোর্ট কার্ড, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার, বিনিয়োগ, করছাড়, করবৃদ্ধি ইত্যাদি বাজেটের নিত্যদিনের বিষয়। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এসব বলা হবে হয়তো। কিন্তু মানুষের দৃষ্টি একটি দিকে আবদ্ধ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রী মহোদয় কী করেন, তা দেখতে সবাই আগ্রহী। আমিও তা-ই। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। প্রথম অভিজ্ঞতা, জিনিসপত্রের মূল্য বেঁধে দিয়ে কোনো কাজ অতীতে হয়নি, আজও হচ্ছে না।


প্রশাসনিক ব্যবস্থা, জেল-জরিমানা অতীতেও কোনো কাজ করেনি, আগামী দিনেও কাজ করবে না। ব্যবসায়ীদের তোয়াজ করে, তাঁদের সঙ্গে সভা-সমিতি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, তা-ও সম্ভব নয়। শুধু ঋণনীতি মানা, মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাণিজ্যনীতি ঠিক করেও সর্বাংশে ফল পাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশ দিয়ে গুদামে গুদামে হামলা করেও জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব নয়। ‘বাজার অর্থনীতি’তে (মার্কেট ইকোনমিতে) সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য, প্রতিযোগিতার জন্য আইন তৈরি হতে পারে, প্রতিষ্ঠান তৈরি করে কিছু লোকের চাকরির ব্যবস্থা হতে পারে; কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে না। এসব কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতার কথা। এই অভিজ্ঞতা আমাদের একার নয়। অনেক দেশেরই, অনেক ক্ষেত্রে।


তাহলে সমাধান কী? কীভাবে ক্রেতাসাধারণ, মধ্যবিত্ত ভোক্তা, গরিব ও নিম্নবিত্ত ভোক্তাদের বাজারের অত্যাচার থেকে বাঁচানো যায়? 
আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে ওষুধ হতে পারে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। অন্যান্য পদক্ষেপ যা আছে, তা থাকুক। খাতায়-কলমে। বাস্তবে দরকার ‘বাজারি পদক্ষেপ’, অর্থাৎ বাজারের চাহিদা-সরবরাহ ঠিক রাখা। যেমন কাঁচা মরিচের দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা, বাজার তা কমাচ্ছে না। সরবরাহ বাড়ান। যেমন এই মুহূর্তে তা জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করা হচ্ছে। ‘বাজার’কে ‘বাজার’ দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।


বেসরকারি বাজারের সমান্তরাল সরকারি বাজার থাকতে হবে, যাতে সংকট হলেই সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে। অনুরোধ-উপরোধ নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি/ অনুমোদন নয়, পণ্যের সংকট হয়েছে, তাই সরাসরি জোগান, আমদানি, সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। আমার বদ্ধমূল ধারণা, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য থাকলে কুচক্রী ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বাড়াতে পারেন না। এ কারণেই দীর্ঘদিন ধরে আমি লিখে আসছি, আমাদের স্থায়ী সরকারি বণ্টনব্যবস্থা দরকার। স্বাধীনতার পর আমাদের রেশনিং ব্যবস্থা ছিল।


গম, চাল, চিনি, তেল আমি নিজেও রেশনের দোকান থেকে তুলেছি। হঠাৎ তা তুলে দিয়ে আমাদের পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলো। এর বদলে অস্থায়ী সব ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে—টিসিবির মাল খোলাবাজারে বিক্রি করা, গরিবদের কার্ডের মাধ্যমে মাল দেওয়া ইত্যাদি। এসব অস্থায়ী ব্যবস্থার ফল অস্থায়ী।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us