অর্থবছরের শেষ মাস। এ মাসেই সরকারকে উন্নয়ন ব্যয়ের বড় একটা অংশ বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই ব্যাংক থেকে ধার করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। শুধু চলতি জুনেই ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চাইছে সরকার। এর অংশ হিসেবে গতকাল ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়া হয়েছে। আরো ৬ হাজার কোটি টাকা ট্রেজারি বন্ডের নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামীকাল (মঙ্গলবার)।
সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ঋণের জোগান দিতে প্রতি রোববার ট্রেজারি বিলের নিলাম (অকশন) ডাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জোগান দিতে নিলাম ডাকা হয় মঙ্গলবার। চলতি জুনে ট্রেজারি বিলের চারটি নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে ৪৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ট্রেজারি বন্ডের নিলামের মাধ্যমে নেয়া হবে আরো ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ। ট্রেজারি বিলের মেয়াদ ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়া হবে ৯১ দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে। আর ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর। সব মিলিয়ে জুনে ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে ৬১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজার থেকে গতকাল বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নিলামে লক্ষ্য অনুযায়ী টাকা উত্তোলন সম্ভব হয়নি। ১১ দশমিক ৬৫ থেকে ১২ শতাংশ সুদ দিয়েও প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিল বিক্রি সম্ভব হয়েছে। ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতির বিচারে এত পরিমাণ ঋণের জোগান আসাটাও বড় ঘটনা।
ব্যাংক নির্বাহীরা অবশ্য বলছেন, চলতি মাসে সরকারকে এত পরিমাণ ঋণ দেয়ার সক্ষমতা ব্যাংক খাতের নেই। ঈদুল আজহা ১৭ জুন হওয়ার সম্ভাবনা। ঈদকে ঘিরে বাজারে নগদ অর্থের চাহিদা বাড়বে। এ অবস্থায় সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে গত অর্থবছরের মতো নতুন টাকা ছাপাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের ব্যাংক খাতে এখনো আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশি। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। একই সময়ে ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল ঋণের প্রবৃদ্ধি। আমানত ও ঋণ প্রবৃদ্ধির এ অসামঞ্জস্যতা কয়েক বছর ধরেই চলছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী আমানত না পাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকই তারল্য সংকটে ভুগছে। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এ সংকট এখন আরো তীব্র হয়ে উঠেছে।