ড. প্রতিমা পাল মজুমদার একজন খ্যাতিমান গবেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে এমএ পাস করে কিছুদিন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ২০১৩ সালে অবসর নিলেও এখনো তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে গবেষণাকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গবেষণাকর্মের মধ্যে নারীর গৃহকর্মের মূল্যায়ন ও জাতীয় আয়ে এর অবদান, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের গতি-প্রকৃতি ও বাধা এবং সহায়ক উপাদানগুলো নির্ণয় অন্যতম। নারীর উন্নয়নে জাতীয় বাজেটের অবদান নিয়েও তাঁর বিস্তৃত গবেষণা আছে। সম্প্রতি বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে ড. প্রতিমা পাল মজুমদারের লেখা ‘বাংলাদেশের পার্বণের রান্না’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।
দেশের মানুষের কাছে আপনার পরিচিতি মূলত একজন গবেষক হিসেবে। তা হঠাৎ রান্নার বিষয়ে বই লিখলেন কেন?
প্রতিমা পাল মজুমদার: নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার বাজেট, নারীর অধিকার ও মর্যাদার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমি বছরের পর বছর গবেষণা করেছি। এই সব বিষয় নিয়ে আমার একাধিক প্রকাশনাও আছে। তবে রান্না, বিশেষ করে বাংলাদেশের পার্বণের রান্না নিয়ে বই লিখে আমাকে কারও কারও কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে এই রান্না বা অন্য কথায় রন্ধনশিল্প বিষয়টিকে আমি নারীর ক্ষমতায়নের একটি শক্তিশালী উপাদান বলেই মনে করি।
বিষয়টি ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। একটু ব্যাখ্যা করবেন?
প্রতিমা পাল মজুমদার: রান্না যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটাও যে নারীর ক্ষমতায়নের একটি হাতিয়ার, এটা আমি প্রথম শিখেছি আমার মায়ের কাছ থেকে। আমার মায়ের হাতের রান্নার খুব সুনাম ছিল। শুধু পরিবারের মধ্যে নয়, পাড়াপড়শিরাও রান্নার বিষয়ে মায়ের কাছে প্রায়ই পরামর্শ নিতেন। তখন বুঝিনি, এখন বুঝি এই রান্নার গুণটি কার্যত মাকে আমার বাবার সঙ্গে সমানে সমানে লড়ার ক্ষমতা দিয়েছিল।
সেটা কেমন?
প্রতিমা পাল মজুমদার: প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, আমাদের পরিবারে স্বাভাবিকভাবেই পুরুষেরই ছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। কারণ, পুরুষেরাই আয়-রোজগার করতেন আর মেয়েরা সামলাতেন ঘরের কাজ। পরিবারের সবার মুখে খাবার জোগানোর জন্য রান্নাঘর সামলানোর কাজটি করতে হতো নারীদের। কিন্তু এই কাজের কোনো আর্থিক মূল্য ছিল না। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নারী অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন, কিন্তু এগুলোকে কোনো ‘কাজ’ বলে মনে করা হতো না। আর যে কাজ করে না, অর্থাৎ যার কাজের কোনো অর্থমূল্য নেই, তার কোনো কথা বা মতামতও ছিল পরিবারে মূল্যহীন।
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখনই আমার বাবা আমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু আমি চাইতাম আরও লেখাপড়া করতে। মা ছিলেন আমার পক্ষে। বাবা যতবার আমার বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন, ততবারই মা বাধা দিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন।